নিয়োগ দুর্নীতিতে সর্বকালীন রেকর্ড!
সোমবার, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে গ্রুপ-সি-র ‘অবৈধ’ নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রকাশিত তালিকায় ৩,৪৭৮ জনের মধ্যে ৩,০৩০ জনের নম্বর দেদার বাড়ানো হয়েছে। কারও প্রাপ্ত নম্বর ০ থেকে বেড়ে হয়ে গিয়েছে ৫৭। আবার, কারও ১ থেকে বেড়ে হয়ে গিয়েছে ৫৪।
গাজিয়াবাদে ওএমআর মূল্যায়নকারী সংস্থা ‘নায়সা’ থেকে পাওয়া তথ্য আর কলকাতার এসএসসি (SSC) অফিস থেকে পাওয়া নম্বরের তালিকার মধ্যে পার্থক্য থাকার অভিযোগ আগেই উঠে এসেছিল তদন্তে। পরে এসএসসি-ও আদালতে স্বীকার করে নেয় সে কথা। এরপর গত ১০ মার্চ, নম্বর কারচুপির তালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ মেনে সোমবার তালিকা প্রকাশ করেছে এসএসসি (SSC)।
জানা গিয়েছে, ওএমআর শিটের নম্বর সার্ভারে তোলার সময় গরমিল করা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওএমআর শিটে থাকা শূন্য, বা এক, দুই নম্বর সার্ভারে হয়েছে ৫৩-৫৪ কিংবা ৫৭। শুধুমাত্র চাকরি প্রাপকরা নয়, ওয়েটিং লিস্টে থাকা অনেকের নম্বরও এভাবে বাড়ানো হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩,০৩০ জনের নম্বরে গরমিল করা হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে এসএসসি (SSC)।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে গ্রুপ সি’তে মোট ২০৩৭ জনকে নিয়োগ দেয় স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)। তাঁদের মধ্যে গত শুক্রবারই, ৭৮৫ জনের সুপারিশপত্র বাতিল করেছে এসএসসি। একইসঙ্গে, সুপারিশপত্র ছাড়াই নিয়োগপত্র পাওয়া ৫৭ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আদালতের নির্দেশে মোট চাকরী হারিয়েছেন ৮৪২ জন গ্রুপ সি কর্মী। সোমবার এই চাকরীহারা গ্রুপ সি কর্মীরা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছেন।
জানা যাচ্ছে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী, সদ্য চাকরিহারা গ্রুপ সি-র ৮৪২ জনের কেউই আর স্কুলে ঢুকতে পারবেন না। স্কুলের কোনও জিনিসেই তাঁরা হাত দিতে পারবেন না। শুক্রবার থেকেই তাঁদের বেতনও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর, বাতিল হওয়া প্রার্থীদের বদলে নতুন নিয়োগ করবে এসএসসি। দ্রুতই ইন্টারভিউ শুরু হবে। তবে যাদের ওএমআর শিটে কারচুপি রয়েছে তাদের ডাকা হবে না।
আগামী ১৬ মার্চের মধ্যে গ্রুপ সি-তে চাকরি পাওয়া সব ব্যক্তির নিয়োগপত্র স্কুল সার্ভিস কমিশনকে পাঠাবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। ২৭ মার্চের মধ্যে তা খতিয়ে দেখবে কমিশন। ২৯ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি। তৈরি হওয়া শূন্যপদগুলিতে আগামী ১০ দিনের মধ্যে ওয়েটিং লিস্ট থেকে নিয়োগের নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এমন পরিস্থিতিতে হাই কোর্টের নির্দেশেই নম্বরে গরমিলের তালিকা সামনে আনল এসএসসি।
মনে করা হচ্ছে, এর ফলে সমগ্র প্যানেলই বাতিল হয়ে যেতে পারে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন