আর জি কর আবহে রাজ্যে ধর্ষণের মামলার আরও দ্রুত বিচার এবং অপরাধীর কঠিন সাজার বন্দোবস্তের জন্য নতুন সংশোধনী বিল আনার ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। সেইমতো মঙ্গলবার বিধানসভায় ‘অপরাজিতা মহিলা এবং শিশু (পশ্চিমবঙ্গ অপরাধ আইন সংশোধনী) বিল ২০২৪’ পেশ করেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। শাসক ও বিরোধীদের দীর্ঘ বচসার পর পাশ হয়ে যায় সেই বিল। এই বিল আইনে পরিণত হলে রাজ্যে ধর্ষণের সাজা হবে জরিমানা-সহ যাবজ্জীবন কারাবাস, নয়তো মৃত্যু।
নতুন সংশোধনী বিলে রয়েছে, ধর্ষণের সাজা জরিমানা-সহ আমৃত্যু কারাবাস। এমনকি মৃত্যুদণ্ডের সাজাও। উল্লেখ্য, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারায় ধর্ষণের সাজা জরিমানা-সহ অন্তত ১০ বছর কারাদণ্ড, যা যাবজ্জীবনও হতে পারে।
নয়া সংশোধনী বিলে রয়েছে, জরিমানার সেই টাকায় নির্যাতিতার চিকিৎসা, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ আদালতের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেই জরিমানার টাকা দিতে হবে। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর ৪৬১ ধারায় উল্লেখ করা রয়েছে এমনটাই।
‘অপরাজিতা মহিলা এবং শিশু (পশ্চিমবঙ্গ অপরাধ আইন সংশোধনী) বিল ২০২৪’ –এ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৫ নং ধারা মুছে ফেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৬, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ১২৪ ধারাতেও বদল আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় নতুন ধারা আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিলে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ধারা ৪৬ ৩এ উপধারায় বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় ওই বিশেষ আদালত তৈরি করতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের সম্মতি নিয়ে ধর্ষণের বিচার করবেন রাজ্যের দায়রা বিচারক বা অতিরিক্ত দায়রা বিচারক। সরকার নির্যাতিতার হয়ে মামলা লড়ার জন্য সাত বছর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিশেষ কৌঁসুলি (স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর) নিয়োগ করবে।
এছাড়া ৪৬ ধারার ৩বি উপধারায় জেলা স্তরে ‘বিশেষ টাস্ক ফোর্স’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সংশোধনী বিলে। সরকারের গঠন করা সেই বাহিনীর নাম হবে ‘অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স’। যার প্রধান হবেন ডেপুটি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনও আধিকারিক। বিলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ধর্ষণের মামলার তদন্ত করবেন মহিলা অফিসারেরা। তদন্ত ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরি করাতে চাইলে তারও শাস্তি জরিমানা পাঁচ হাজার টাকা সহ ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হবে।
পাশাপাশি, নয়া সংশোধনী বিলে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর ১৯৩ ধারা সংশোধনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, থানার ওসিকে এফআইআর দায়েরের ২১ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। তার মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে আরও ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। তবে তার বেশি নয়। ওসি না পারলে এসপি পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বে অতিরিক্ত ১৫ দিনের সময় দেওয়া হবে তদন্তের জন্য। বিলে আরও প্রস্তাব আনা হয়েছে, চার্জশিট জমা দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিশেষ আদালতে শেষ করতে হবে বিচার।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন