‘শিশুদের মুখের অন্নের টাকা কেড়ে নিয়ে তৃণমূলের করা গণহত্যার ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হচ্ছে? কেন? মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব জেলাশাসকরা কী করছেন? অবিলম্বে তদন্ত করুন।‘ মিড ডে মিলের টাকা বগটুই কাণ্ডে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে একথা বলেছেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী।
মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ টাকা বগটুই কাণ্ডে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে! রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললো বিরোধীরা। এই ঘটনায় সঠিক তদন্তের দাবি তুলেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী এবং সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী।
মিড ডে মিলের প্রায় ৬৭ লক্ষ টাকা অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়েছে বগটুই কাণ্ডে নিহতদের পরিবারগুলিকে। এর তীব্র নিন্দা করে সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘শিশুদের মুখের অন্নের টাকা কেড়ে নিয়ে তৃণমূলের করা গণহত্যার ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হচ্ছে। এটা আমি বিশ্বাস করতে চাই না।কিন্তু হিঙলগঞ্জে মুখ্যমন্ত্রীর রাজকীয় সভার পিছনে মিড ডে মিলের ৩৬ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। মিড ডে মিলের টাকায় যদি মুখ্যমন্ত্রীর সভা-ভ্রমণ হয়, ১০০ দিনের টাকায় যদি বিরিয়ানি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে বগটুইয়ের ক্ষতিপূরণ মিড ডে মিলের টাকায় হয়েছে সেটা অবিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। ওনার দলের লোকেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরেছে, সেজন্য শিশুদের মুখের অন্নের টাকা কেড়ে নিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কেন? তদন্ত হওয়া উচিত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব জেলাশাসকরা কী করছেন? অবিলম্বে তদন্ত করুন আপনারা।‘
ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া চেকের ছবি এবং ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের ব্যাংকের পাশবইয়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এই নিয়ে সরব হয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীও। এই ঘটনাকে একটি ‘অর্থনৈতিক অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছেন।কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধমেন্দ্র প্রধানকে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২১ মার্চ বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে তৃনমুল কংগ্রেসের উপপ্রধান ভাদু সেখ দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া বোমার আঘাতে নিহত হন। সেই খুনের বদলা নিতে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে খুন করা হয় আরো দশ জনকে। সেই ঘটনার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বগটুই গ্রামে এসে নিহতদের পরিবার প্রতি সাত লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষনা করেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই রামপুরহাট এক নম্বরের বিডিও দীপান্বিতা বর্মণের সাক্ষর করা চেক তুলে দেওয়া হয় বগটুই কাণ্ডে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে । এই টাকা মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ টাকা থেকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
তাছাড়াও রামপুরহাটের পারকান্দিতে সাত ক্ষেতমজুরের মৃত্যু হয় পথ দুর্ঘটনায় । সেই ক্ষেত মজুরদের পরিবারের হাতেও দু'লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এই টাকাও মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ টাকা থেকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
যদিও কোন খাত থেকে অর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে সেই বিষয়টি জানিনা বলে জানিয়েছেন বগটুই কাণ্ডে নিহতদের পরিবারের অন্যতম সদস্য মিহিলাল শেখ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন