আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল কর্মসূচি। সেই মতো শুক্রবার থেকে শুরু হল সিঙ্গুরে শিল্পের দাবিতে নবান্ন যাত্রা। ‘সিঙ্গুর বন্ধ্যা জমি পুনর্ব্যবহার কমিটি’ নামক কমিটি শিল্পের দাবিতে নবান্নে সাত দাবি পেশ করবে বলে জানা গেছে। যদিও এই কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ওই এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না।
২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটা ন্যানো কারখানা করার উদ্দেশ্যে এক হাজার একর জমি তৎকালীন সরকার অধিগ্রহণ করেছিল। সেই সময় জোর করে জমি নেওয়া হয়েছে, এই দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। এই আন্দোলনের মুখ হয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আট বছর আগে সেই এক হাজার একর জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু সেই ফিরিয়ে দেওয়া জমির ৭০০ একর জমি চাষযোগ্য না। ওই খালি জমিতে শিল্প স্থাপনের দাবি জানিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন কৃষকদের একাংশ। এরপরেই সপ্তাহখানেক আগে গঠিত হয় ‘সিঙ্গুর বন্ধ্যা জমি পুনর্ব্যবহার কমিটি’। কমিটিতে ২১ জন সদস্য রয়েছে।
এবিষয়ে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক দুধকুমার ধাড়া বলেন, ‘‘জমি ব্যবহার হয় তিনটে কাজে। হয় চাষে, নয় বসবাস, না হলে শিল্প। কিন্তু সিঙ্গুরের জমিতে চাষও হচ্ছে না। বাসও হচ্ছে না আর শিল্পও হচ্ছে না। এটাই এখন বাস্তব। চাষ হচ্ছে শুধুমাত্র ৩০০ একর জমিতে। বাকি জমি যাতে ব্যবহারযোগ্য করা যায়, তার জন্যই কমিটি তৈরি হয়েছে।“
এরপরেই তিনি জানান, “আমাদের দাবি, যে জমি চাষযোগ্য হয়নি তা চাষের উপযোগী করতে হবে। নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। অধিগ্রহণের পূর্বে চাষিদের যা অধিকার ছিল, সেই অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। অধিগৃহীত জমির একশো একরে আগে ছোট ছোট শিল্প ছিল। সেগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও জমি যদি চাষযোগ্য করা না যায়, তা হলে সেখানে কারখানা করতে হবে।’’
এক সময় সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের অন্যতম মুখ মহাদেব দাস বর্তমানে বন্ধ্যা জমি পুনর্ব্যহার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আগামী প্রজন্ম জানতে চাইবে, ‘তোমরা আন্দোলন করেছিলে। তোমাদের নাম ইতিহাসের পাতায় রয়েছে। কিন্তু সেই জমিতে চাষও হল না, শিল্পও হল না। তা হলে আমাদের কী লাভ হল।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাইরের লোক কে কী পেয়েছেন, সেটা বড় ব্যাপার নয়। আমাদের এখানে থাকতে হবে। আমাদেরই মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে। সেই ভেবেই সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মাধ্যমে যিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তাঁর কাছে আমরা একাধিক দাবি লিখিত আকারে তুলে ধরছি।’’
যদিও এই বিষয়কে বিশেষ নজর দিতে নারাজ বিধায়ক বেচারাম মান্না। তিনি জানিয়েছেন, ওই এক হাজার একর জমির মধ্যে ৯১ শতাংশ জমিই চাষযোগ্য। এছাড়া রাস্তার পাশে কিছু জমি রয়েছে সেগুলো হোটেল, ধাবা, পেট্রল পাম্প ইত্যাদি তৈরির জন্য অনেকে কিনেছিলেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন