কল্যাণী এইমসে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে বিজেপি বিধায়কের বাড়িতে হানা দিল সিআইডি। নদিয়া জেলার চাকদাহের বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষের বাড়িতে বুধবার হানা দেয় সিআইডি। বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের পুত্রবধূকে বেআইনিভাবে কল্যাণী এইমসে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন।
জানা গেছে, বুধবার বিকেলে সিআইডির চার আধিকারিকের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্কিম ঘোষের বাড়িতে যায়, যা নাদিয়ার হরিণঘাটার জাগুলিতে অবস্থিত। তদন্তকারীদের সাথে হরিণঘাট থানার বিশাল পুলিশ বাহিনীও যায়। যদিও সেই সময় বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না বিধায়ক। তবে বাড়িতে ছিলেন তাঁর পুত্রবধূ অনসূয়া ঘোষ। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অনসূয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি।
সূত্রের খবর, অনসূয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি জানতে পেরেছে, গত এপ্রিল মাসে কল্যাণী এইমসের ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের পদে যোগ দিয়েছেন তিনি। যদিও তখন তিনি কোনো নিয়োগ পত্র পাননি। গত ১০ জুন নিয়োগপত্র পান তিনি। বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠতেই তড়িঘড়ি অনসূয়াকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে সিআইডি। নিয়োগ পত্র না পাওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি কাজে যোগ দিয়েছিলেন, এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি অনসূয়া বলে জানা গেছে। পরীক্ষায় কত নম্বর তিনি পেয়েছিলেন, ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন কিনা এই সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নেরও উত্তর দেননি তিনি।
এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন অনসূয়াকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। কারণ এদিন কোনও প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দেননি তিনি। বঙ্কিম বাবুর পরিবারের অন্যান্য লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁরাও কোনো উত্তর দিতে চাননি।
এদিন দিনভর বঙ্কিম বাবুর দুটি মোবাইল ফোনই সুইচড অফ ছিল। সিআইডি আধিকারিকরা বারবার তাঁর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। বিধায়কের গোটা বাড়িতে এদিন তল্লাশি চালিয়েছেন তদন্তকারীরা।
অনসূয়ার মতোই বেআইনিভাবে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মৈত্রী দানার বিরুদ্ধে, তিনি বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রি শেখর দানার মেয়ে। শুক্রবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নোটিশ পাঠিয়েছে সিআইডি। এর আগেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তখন সময় চেয়েছিলেন মৈত্রী দানা। তাই ফের নোটিশ পাঠানো হয়েছে তাঁকে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কল্যাণী এইমসের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদের জন্য পরীক্ষা হয়েছিল। কয়েকশ চাকরি প্রার্থী এই পরীক্ষায় বসেছিলেন। তদন্তভার হাতে আসার পর অন্যান্য বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীদের সাথে কথা বলে সিআইডি আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, এই পরীক্ষার ফল কবে প্রকাশিত হয়েছে এবং মেধা তালিকা কোথায় সেই বিষয়ে কিছুই জানেন না তাঁরা।
এই নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ২০ মে সরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি প্রথম কল্যাণী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি নীলাদ্রিশেখর দানা এবং বঙ্কিম ঘোষ ছাড়াও রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের নাম উল্লেখ করেন। এছাড়াও বিজেপি ঘনিষ্ঠ আরও চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এঁরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে আত্মীয় পরিজনদের কেন্দ্র সরকার পরিচালিত কল্যাণী এইমসে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। একই অভিযোগ জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেছেন নদিয়া দক্ষিণ বিজেপির সাংগঠনিক সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
সরিফুলের অভিযোগের ভিত্তিতে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪০৬, ১২০-বি এবং ৩৪ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল কল্যাণী থানা। গত মাসে সিআইডি এই তদন্তভার গ্রহণ করে।
যদিও এই অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত বিজেপি নেতাদের দাবি, এটি একটি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ। SSC নিয়োগ দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরাতে এই অপচেষ্টা চলছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন