স্কুল সার্ভিস (SSC), কলেজ সার্ভিসের (CSC) মতো এবার কল্যাণী এইমসেও (Kalyani AIIMS) নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নাম জড়িয়েছে বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের। যা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল কল্যাণী থানা। এবার সেই মামলা তুলে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির (CID) হাতে।
জানা যাচ্ছে, প্রভাব খাটিয়ে চাকরী দেওয়ার অভিযোগে বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছেন - কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার (Subhas Sarkar), রাণাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার (Jagannath Sarkar), চাকদহের বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ (Bankim Ghosh) এবং বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা (Niladri Sekhar Dana)-সহ ৮ জন।
গত ২০ মে, সরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি কল্যাণী এইমসে ‘নিয়োগ দুর্নীতি’ নিয়ে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কল্যাণী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। একই অভিযোগ জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)-কে চিঠি লিখেছেন নদিয়া দক্ষিণ বিজেপির সাংগঠনিক সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chattopadhay)। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে।
জানা গেছে, অভিযোগের ভিত্তিতে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪০৬, ১২০-বি এবং ৩৪ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল কল্যাণী থানা। এবার সেই মামলায় তদন্ত শুরু করবে সি আই ডি।
কল্যাণীর এইমস কেন্দ্র সরকার পরিচালিত। সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিজেপি নেতারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে আত্মীয় পরিজনদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বয়ং বিজেপি কর্মীরা। অভিযোগ, কারও মেয়ে, কারও পুত্রবধূ চাকরি পেয়েছেন এইমসে। আর সেই চাকরি হয়েছে যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, প্রভাব খাটিয়ে।
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, 'যাঁরা এ ভাবে ( পড়ুন - প্রভাব খাটিয়ে) চাকরি পেয়েছেন, সেই তালিকায় বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানার মেয়ে, নদিয়ার চাকদহের বঙ্কিম ঘোষের পুত্রবধূর নাম রয়েছে।' পরে কল্যাণী থানায় অভিযোগ দায়ের করে সরিফুল ইসলাম।
তবে, এই ঘটনাকে তৃণমূলের পাল্টা চাল হিসাবে মন্তব্য করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি দাবি করেন, 'SSC নিয়োগ দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরাতে রাজনৈতিক অপচেষ্টা চলছে। তৃণমূলের তরফে উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে এই এফআইআর করা হয়েছে।'
একই দাবি বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানার। তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, 'এটি একটি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ।'
অভিযুক্ত বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ জানিয়েছেন, 'যাঁরা চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে তাঁরা কেউ এইমসে সরকারি চাকরি করেন না। কল্যাণী এইমসের আওতাধীন বেসরকারি সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক চাকরি দেওয়া হয়েছে।'
এদিকে, রাণাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার দাবি করেছেন, 'পুলিশ তৃণমূলের চাপে পড়ে কেস নিয়েছে। মূল কারণ হল এসএসসি-সিএসসিতে দুর্নীতিকে চেপে রাখা।'
এই ইস্যুতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সিপিআইএম-এর বর্ষীয়ান নেতা সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty)। তিনি বলেন, 'দেখুন বিজেপি যে পথে চলে, তৃণমূলও সেই পথে চলে। আবার তৃণমূল যে পথে চলে, বিজেপিও একই পথে চলে। তৃণমূল যেমন পশ্চিমবাংলায় খুশিমত দুর্নীতি, বিশেষ করে নিয়োগের ক্ষেত্রে করছে, সেখানে বিজেপির কাছে থেকে অন্যকিছু আশা করেন নাকি! এইমসে নিয়োগের ক্ষেত্রে একইরকমভাবে অভিযোগ আসছে। বিধায়করা তাঁদের নিজেদের লোকদের ঢোকাবার ব্যবস্থা করেছেন। সমান অপরাধ।'
এদিন এইমসের সঙ্গে এসএসসি, সিএসসি'তে নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে বাম নেতা আরও বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গে এসএসসি'তে যেটা হয়েছে, সেটা রেকর্ড। কেলেঙ্কারির রেকর্ড। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, এইমসে খুশিমত বিজেপি নেতারা নিয়োগ করবেন। না, তা মেনে নেওয়া হবে না।'
সিআইডি সূত্রে খবর, এব্যাপারে এফআইআর-এর নাম থাকা সবাইকেই কিছু দিনের মধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন