মিড ডে মিলের টাকায় বগটুই কাণ্ডের ক্ষতিপূরণ! চাঞ্চল্যকর অভিযোগে সরগরম রাজ্য

সুজন চক্রবর্তী বলেন, "তৃণমূলের লোকেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরেছে, সেজন্য শিশুদের মুখের অন্নের কেড়ে নিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কেন?"
মিড ডে মিলের টাকায় বগটুই কাণ্ডের ক্ষতিপূরণ! চাঞ্চল্যকর অভিযোগে সরগরম রাজ্য
ফাইল ছবি
Published on

মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ টাকা বগটুই কাণ্ডে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে! রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর এই অভিযোগ তুললো বিরোধীরা। এই ঘটনায় সঠিক তদন্তের দাবি তুলেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী এবং সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী।

 মিড ডে মিলের প্রায় ৬৭ লক্ষ টাকা অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়েছে বগটুই কাণ্ডে নিহতদের পরিবারগুলিকে। প্রথমে এই অভিযোগ তোলেন বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা। এরপর এরপর এই অভিযোগে সরব হন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। দুজনই চেকের ছবি এবং ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের ব্যাংকের পাশবইয়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।

ধ্রুব সাহা নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘পার কাঁদিতে হতদরিদ্র জনজাতি মানুষগুলো মারা যাওয়ার পরে, সাহায্য করছিল বলে কেন্দ্র সরকারের মিড ডে মিলের টাকা দিয়েছিল। আবার সামনে এলো বগটুই-এর ঘটনায় যে সমস্ত মানুষগুলোকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছিল সেই টাকাও কেন্দ্রীয় স্কিম মিড ডে মিল থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার সত্য অসত্য বিচার করে তদন্তের দাবি জানাই।’

 সংবাদমাধ্যমের সামনে ধ্রুব বলেন, ‘বগটুইয়ে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের পাঠানো মিড ডে মিলের টাকা থেকে। আমার কাছে যে চেকের ছবি এসেছে তাতে তা প্রমাণিত। এই ঘটনার তদন্ত দাবি করছি। আমি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব। এরা এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ করছে। মিড ডে মিলের টাকা, বাচ্চা শিশুদের খাবারের টাকা। এই টাকা নিয়ে ওদের রাজনীতি করার অধিকার কে দিয়েছে’?

শুভেন্দু অধিকারীও নিজের টুইটারে  প্রায় একই কথা বলে এই ঘটনাকে একটি  ‘অর্থনৈতিক অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছেন।কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী ধমেন্দ্র প্রধানকে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

মিড ডে মিলের টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ব্যবহার হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। এদিন তিনি বলেন, ‘শিশুদের মুখের অন্নের টাকা কেড়ে নিয়ে তৃণমূলের করা গণহত্যার ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হচ্ছে। এটা আমি বিশ্বাস করতে চাই না।কিন্তু হিঙলগঞ্জে মুখ্যমন্ত্রীর রাজকীয় সভার পিছনে মিড ডে মিলের ৩৬ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। মিড ডে মিলের টাকায় যদি মুখ্যমন্ত্রীর সভা-ভ্রমণ হয়, ১০০ দিনের টাকায় যদি বিরিয়ানি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে বগটুইয়ের ক্ষতিপূরণ মিড ডে মিলের টাকায় হয়েছে সেটা অবিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। ওনার দলের লোকেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরেছে, সেজন্য শিশুদের মুখের অন্নের কেড়ে নিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কেন? তদন্ত হওয়া উচিত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব জেলাশাসকরা কী করছেন? অবিলম্বে তদন্ত করুন আপনারা।‘

যদিও এই অভিযোগে অস্বীকার করেছে তৃণমূল।  জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বগটুই কাণ্ডের ১ বছর হতে চলল, এতদিন পরে ওদের মনে পড়ল? ওরা কি আর কোনও রাজনৈতিক ইস্যু পাচ্ছে না? সেই জন্য এই সমস্ত কথা ওরা বলে বেড়াচ্ছেন? মিড ডে মিলে কী হয়েছে তা জানার জন্য ওরা আরটিআই করতে পারে। নির্বাচনের মুখে শুধু শুধু বাজার গরম করার কোনও মানে হয় নাচ।'
উল্লেখ্য,  গত ২১ মার্চ বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে তৃনমুল  কংগ্রেসের উপপ্রধান ভাদু সেখ দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া বোমার আঘাতে নিহত হন। সেই খুনের বদলা নিতে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে খুন করা হয় আরো দশ জনকে। সেই ঘটনার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বগটুই গ্রামে এসে নিহতদের পরিবার প্রতি সাত লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষনা করেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই রামপুরহাট এক নম্বরের বিডিও দীপান্বিতা বর্মণের সাক্ষর করা চেক তুলে দেওয়া হয় বগটুই কাণ্ডে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ।

তাছাড়াও রামপুরহাটের পারকান্দিতে সাত ক্ষেতমজুরের মৃত্যু হয় পথ দুর্ঘটনায় । সেই ক্ষেত মজুরদের পরিবারের হাতেও দু'লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এই টাকাও মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ টাকা থেকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

 যদিও কোন খাত থেকে অর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে সেই বিষয়টি জানিনা বলে জানিয়েছেন বগটুই কাণ্ডে নিহতদের পরিবারের অন্যতম সদস্য মিহিলাল শেখ ।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in