তুহিনা খাতুন। আত্মঘাতী হওয়া এক ১৭ বছরের কলেজ ছাত্রী। বেশিদিন আগের ঘটনা নয়। সেই মেয়ের মৃত্যুর পিছনের রহস্য নিয়ে এবার পথে নামতে চলেছে বামেরা। আনিস হত্যাকান্ডের পর এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য জুড়ে।
প্রসঙ্গত, পুরভোটের আগে দেওয়াল লিখন হয়েছিল, যেখানে তিনটি মেয়ের দেহ ঝুলছে। এর মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, পুরভোটের ফলপ্রকাশ নিতান্তই সময়ের অপেক্ষা। এরপরেই গলায় দড়ি দিয়ে মরতে হবে তিন বোনকে। পুরভোটের নির্বাচনী আচরণবিধি জারি। তারই মধ্যে বর্ধমানের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের দেওয়ালে হুমকি বার্তা দেওয়া হয়।
এমন নৃশংস ও অমানবিক ছবি আঁকানোর অভিযোগ ওঠে ওই ওয়ার্ডেরই তৃণমূল প্রার্থী শেখ বসির আহমেদ ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। যদিও ওই ছবি মুছে দেওয়ার কোনও তাগিদ রাজ্য নির্বাচন কমিশন বা পুলিশ-কারওর পক্ষ থেকেই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তাই ওই ছবি এলাকায় দেওয়ালেই রয়ে যায়। ছবির কথাই ফলে যায় ২ মার্চ।
ঘটনাটি ঘটে বর্ধমানের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুরবাগ নতুনপল্লি এলাকায়। পুরভোটের ফলপ্রকাশের পরেই বিকেলে বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় স্থানীয় তৃণমূল সমর্থক পরিবারের মেয়ে তুহিনার ঝুলন্ত দেহ। বাড়িতে চড়াও হয়ে হুমকি শাসানি দিয়ে তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
বর্ধমান রাজ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তুহিনার মৃত্যু নিয়ে শুক্রবার বর্ধমানের জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন এসএফআইয়ের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি বিশ্বরূপ হাজরা। তিনি স্পষ্ট জানান, শাসকের রাজনৈতিক হিংসা ও অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তুহিনা আত্মঘাতী হয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধির মধ্যে তুহিনাদের বাড়ির ঠিক আগে ওই দেওয়াল অঙ্কন করা হয়। ঘটনায় অমানবিক ও আদিম হিংস্রতার প্রকাশ ঘটে। এই ঘটনা নিয়ে এসএফআই বৃহত্তর প্রতিবাদ আন্দোলনে করবে।
বিচার চেয়ে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই ও গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদস্যারা বর্ধমান থানার সামনে ধরনায় বসেন। দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনির্বাণ হাজরা।
পাশাপাশি সোচ্চার হয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বও। প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি নেপাল মাহাতো এদিন জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে বাবুরবাগে তুহিনার বাড়িতে যান। কংগ্রেস নেতাদের কাছে তৃণমূল কাউন্সিলর বসির ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করে তুহিনার পরিবার। এখনও বসির হুমকি দিচ্ছে বলে তাঁরা জানান।
কেন কমিশন ওই ছবি মুছে দিল না? এই প্রশ্নের উত্তরে বর্ধমান সদর মহকুমাশাসক তথা পুর নির্বাচনী আধিকারিক তীর্থাঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমার কাছে কোনও অভিযোগও আসেনি।' ডিএসপি (সদর) অতনু ঘোষাল বলেন, ‘মৃতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগের সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন