রাণাঘাট দক্ষিণ (তপঃ) কেন্দ্রের উপনির্বাচনে অবাধে ছাপ্পা, বুথ দখল, রিগিং-এর অভিযোগ তুলে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানালেন এই কেন্দ্রের কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী অরিন্দম বিশ্বাস। বুধবার ভোট চলাকালীন এই কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসারকে এক চিঠি লিখে সিপিআইএম প্রার্থী এই দাবি জানিয়েছেন।
রিটার্নিং অফিসারকে লেখা চিঠিতে সিপিআইএম প্রার্থী অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, আজ গণতন্ত্রের কালো দিন। তিনি আরও বলেন, শাসক দল, প্রশাসন, পুলিশ সবার প্রত্যক্ষ মদতে আজকের নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।
সিপিআইএম প্রার্থীর আরও অভিযোগ, গত রাত থেকেই সিপিআইএম-এর এজেন্টদের ওপর হামলা, শারীরিকভাবে নিগ্রহ এবং তাদের বাড়িঘর লুটপাট করেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বিশেষ করে আক্রমণ চালানো হয়েছে পায়রাডাঙা, আনুলিয়া, দেবগ্রাম, শ্যামনগর গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলে। আজ সকালেও বিভিন্ন বুথ থেকে গুন্ডাবাহিনী সিপিআইএম এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। ভোট চলাকালীন মুখে মুখোশ পরে বাইক বাহিনী এলাকা দাপিয়ে বেড়িয়েছে। আমরা বারবার অভিযোগ জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কুইক রেসপন্স টিম কোনও কাজ করেনি। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এই কেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণের আবেদন জানাচ্ছি।
এদিন নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার প্রতিবাদে সিপিআই(এম)নদীয়া জেলা কমিটির পক্ষ থেকে রানাঘাট SDO অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন দলীয় কর্মীরা। রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী অরিন্দম বিশ্বাস অভিযোগ করেন, গোটা নদীয়া জেলার ক্রিমিনালদের জড়ো করা হয়েছে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার জন্য। আর.ও-সহ গোটা নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণরূপে নীরব থেকে ভোট লুট সম্পন্ন করেছে। রানাঘাট অঞ্চলে যেভাবে দুর্নীতিবাজ নেতা, দলবদলুরা ক্ষমতা দখল করে রেখেছে, এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ সুযোগ পেলে তৃণমূল বিজেপিকে পরাস্ত করতো। রাজ্যের বিরোধীদল হিসেবে বিজেপি নিজেদের দাবি করলেও আশ্চর্যজনকভাবে তাদের ময়দানে দেখা যাচ্ছে না, বেশিরভাগ বুথেই তারা এজেন্ট দেননি। গোটা নির্বাচন কমিশন, তৃণমূল, বিজেপি এক হয়ে আজকে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত করছে। নির্বাচনের নামে এই প্রহসন বাতিল করে পুনরায় রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের সাধারণ মানুষের সঠিক গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিতে হবে বলে তিনি জানান।
বিগত ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল প্রার্থী বর্ণালী দে রায়কে ১৬,৫১৫ ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন মুকুটমণি অধিকারী। যদিও সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন এবং ওই দলের প্রার্থী হিসেবে লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ও পরাজিত হন। তাঁর দলত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া এই আসনে আজ উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে।
এদিন রাণাঘাট দক্ষিণ ছাড়াও ভোট গ্রহণ হচ্ছে রায়গঞ্জ, বাগদা এবং মাণিকতলা কেন্দ্রেও। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাজ্যে চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটদানের গড় হার ৬২.৭১ শতাংশ। চার কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে। ভোটদানের হার ৬৭.১২ শতাংশ। রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৬৫.৩৭ শতাংশ, বাগদায় ৬৫.১৫ শতাংশ এবং মানিকতলায় ৫১.৩৯ শতাংশ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন