বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সামনেই প্রাক্তনীদের একাংশকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এর জেরে উপাসনাগৃহের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখান প্রাক্তনীদের একাংশ।
বিশ্বভারতীর সমাবর্তন উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনে আসেন রাজনাথ সিং। সমাবর্তনের প্রধান অতিথি তিনি। এদিন সন্ধ্যাতেই শান্তিনিকেতনের রতন পল্লীতে গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে বিবিসির তৈরি তথ্যচিত্র 'দ্য মোদী কোয়েশ্চন' দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল ছাত্র সংগঠন DSO। কিন্তু এদিন সেটি দেখানো সম্ভব হয়নি। অভিযোগ, বিশাল পুলিশ বাহিনী দিয়ে সেই প্রদর্শন বন্ধ করিয়ে দেওয়া হয়। এই নিয়েই আজ সকালে উত্তেজনা তৈরী হয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে।
আজ সকালে রতনপল্লী সহ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের একাধিক জায়গায় উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে পোস্টার লক্ষ্য করা যায়। পোস্টারে লেখা হয়, 'ভিসি দূর হটো, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী গো ব্যাক'। সমাবর্তনকে 'রাজনৈতিক অনুষ্ঠান' বলেও দাবি করা হয়েছে পোস্টারে। এরপরই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢুকতে ভলাধা দেওয়া হয় প্রাক্তনীদের একাংশকে। গেটের বাইরেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। স্লোগান দিতেও থাকেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন রাজনাথ সিং। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কয়েকজন প্রাক্তনীকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। কিন্তু যাঁদের কাছে ব্যাগ বা মোবাইল ফোন ছিল, তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়না বলে অভিযোগ।
এবারের সমাবর্তন নিয়ে একাধিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কোনও পড়ুয়াকে এবার মঞ্চ থেকে শংসাপত্র দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সমাবর্তনের নিয়ম অনুযায়ী, বিভাগীয় প্রধানদের তত্ত্বাবধানে ছাত্র ছাত্রীদের আমন্ত্রণ করা হয়। তাঁরা মঞ্চে উঠে শংসাপত্র নেন। কিন্তু এবার বিশ্বভারতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভাগীয় প্রধানদের হাতে শংসাপত্রগুলি তুলে দেওয়া হবে। তাঁরা পরে সেগুলি ছাত্র ছাত্রীদের দিয়ে দেবেন।
কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ অধ্যাপক, পড়ুয়া সহ বিশিষ্ট মহল। এর পিছনে অন্য কারণ দেখছে তাঁরা। ২০২২ সালের পড়ুয়াদের একটি বড় অংশ উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিরোধী। শংসাপত্র নেওয়ার সময় পড়ুয়ারা যদি কোনও অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে এবং তার জেরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে অস্বস্তিতে পড়তে হতে পারে - এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যই এই কৌশল নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এই প্রসঙ্গে ২০২২ সালের ছাত্র আন্দোলনের মুখ এসএফআই নেতা সোমনাথ সৌ বলেন, “সমাবর্তনের নামে ভন্ডামি হচ্ছে। যেখানে পড়ুয়ারাই ব্রাত্য সেখানে সমাবর্তন হয় কী করে? কোনো নিয়ম নীতি মানা হচ্ছে না। হঠাৎ দু’দিন আগে ঘোষণা করা হল সমাবর্তন হবে। দূর দূরান্তের পড়ুয়ারা আসবে কী করে? আসলে সমাবর্তনের মঞ্চে রাজনৈতিক নেতাদের এনে তাদের প্রতি আনুগত্য জাহিরে মরিয়া কেউ ব্যক্তিস্বার্থ পূর্ণ করতে চাইছেন।”
সমাবর্তন প্রসঙ্গে অধ্যাপকদের সংগঠন ভিবিউফা সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা, কথায় কথায় শাস্তির খাঁড়া নামানোর বিরুদ্ধে যে সব অধ্যাপকরা দৃঢ়তার সঙ্গে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের কাউকে সমাবর্তনে আমন্ত্রণ করা হয়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন