লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা দেবে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘর থেকে মমতা ঘোষণা করলেন আগামী ১৫-৩০ ডিসেম্বরের আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির বরাদ্দ দেওয়ার কথা। পাশাপাশি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আরও ১ লক্ষ মানুষকে বাড়ি তৈরির ওই টাকা দেওয়া হবে। সবমিলিয়ে এদিন মোট চার প্রকল্পে উপভোক্তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা এবং একশো দিনের কাজের বরাদ্দ বন্ধ করে রেখেছে কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের আগেই রাজ্য আবাসের বরাদ্দ দেবে বলে ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। সেই মতো শুরু হয়েছিল উপভোক্তা পুনর্যাচাইয়ের প্রক্রিয়া। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেই প্রক্রিয়া শেষ লগ্নে। আগামী ১৫-৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে উপভোক্তাদের বরাদ্দের প্রথম কিস্তি দেওয়া হবে। তালিকায় ১১ লক্ষের নাম থাকলেও, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আরও ১ লক্ষ বাড়িয়ে ১২ লক্ষ করা হয়েছে।
মমতা জানিয়েছেন, দু’টি কিস্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ফলে ৬০ হাজার টাকা করে মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে পাবেন প্রত্যেক উপভোক্তা। মমতার কথায়, ‘রাজ্য ৪০% টাকা দেয়, তার পরেও প্রধানমন্ত্রীর নামে প্রকল্প কেন? আমি তো আমার নামে কোনও প্রকল্প করিনি। ১০ বছর পরে আমি মারা গেলেও, কেউ আমার মূর্তি তৈরি করুক, তা চাই না।‘ মমতার সংযোজন, ‘তিন বছর টাকা দেয়নি। কেন্দ্রের থেকে ২৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা পাই। এ বার থেকে এই প্রকল্পের নাম ‘বাংলার বাড়ি’। ১২ বছরে ৫০ লক্ষ বাড়ি করে দিয়েছি। টাকা আমাদের, নামও আমাদের।‘ আরও ২৪ লক্ষ উপভোক্তা বাকি থাকবেন। তাঁদের দফায় দফায় দেওয়া হবে। মমতা জানান, ‘দু-তিন বছর সময় নিচ্ছি।‘
আবাস যোজনা ছাড়াও লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে আরও ৫ লক্ষ ৭ হাজার নতুন উপভোক্তা যুক্ত করা হয়েছে বলে এদিন জানান মমতা। এখন ওই প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা ২.২১ কোটি। তাতে এতদিন পর্যন্ত সরকারের মোট খরচ হয়েছে ৪৮ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। নতুন ৫.০৭ লক্ষের জন্য অতিরিক্ত আরও প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা খরচ হবে। মমতার কথায়, ‘ভোটের কথা মাথায় রেখে অন্যান্য রাজ্য করেছে। কিন্তু তা পেতে গেলে প্রচুর শর্ত পূরণ করতে হয়। আমাদের রাজ্যে কোনও শর্ত নেই। প্রত্যেকের জন্য প্রকল্প উন্মুক্ত। এমনকি, পরিবারে চারজন মহিলা থাকলেও প্রত্যেকে টাকা পাবেন।‘
এছাড়া বিধবা ভাতাতেও আরও ৪৩ হাজার ৯০০ জনকে আগামী ডিসেম্বর থেকে টাকা দেওয়া শুরু হবে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন তাতে উপভোক্তা সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষ ৩২ হাজার। তাতে খরচ হত ২৪৫০ কোটি টাকা। নতুন অন্তর্ভুক্তির ফলে খরচ বেড়ে হবে তিন হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি, বিশেষ ভাবে সক্ষম প্রকল্পেও আরও ১৯ হাজার নতুন উপভোক্তা যুক্ত করা হয়েছে। এতদিন প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ উপভোক্তা ভাতা পেতেন মোট ৯০০ কোটি টাকার।
অন্যদিকে, নতুন কৃষকবন্ধু প্রকল্পে প্রায় ১.০৮ কোটি উপভোক্তাকে একটি কিস্তির ২৯৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দে ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে এ বছর ৫৮৫৯ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২১ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। এছাড়া কৃষকদের মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১.২৭ লক্ষ উপভোক্তাকে দেওয়া হয়েছে ২৫৪৪ কোটি টাকা। মমতার কথায়, ‘আমি যা কথা দিই, তা রাখি।‘
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন