গ্রেফতারির ঠিক দুদিন আগে অর্থাৎ গত মঙ্গলবার তাঁর নীচুপট্টির বাড়িতে মলয় পিট নামের এক ব্যক্তিকে তলব করেছিলেন অনুব্রত মন্ডল। কিন্তু কে এই মলয় পিট?
জানা গেছে - অনুব্রতর খাসতালুক শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের সভাপতি এই ব্যক্তি। তাৎপর্যপূর্ণভাবেই সাংবাদিকদের সামনে এবার মুখ খুলেছেন মলয়। অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ মলয় পিটের বক্তব্যের জেরেই এবার প্রকাশ্যে এল আরও এক দুর্নীতির চিত্র।
সূত্রের খবর, গোরু-বালি-কয়লা পাচারের পর কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন যাবৎ একচেটিয়া আধিপত্য চালিয়েছেন অনুব্রত-মলয় জুটি। বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে টেন্ডার ডেকে বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিষয়টি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অনুব্রত-মলয়ের বিরুদ্ধে।
ন্যাশনাল স্কিল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (এনএসকিউএফ)-র অধীনে ২০১৩ সাল থেকে রাজ্যের বহু সরকারি এবং সরকার পোষিত মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণী পর্যন্ত বৃত্তিমূলক পড়াশোনা করানো হয়। প্রথমে এটি রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের অধীনে ছিল। পরে তা কারিগরি দপ্তরের অধীনে চলে যায়। শিক্ষক নিয়োগ থেকে ল্যাবের কাজ শেখার যন্ত্রপাতি ও পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ সবই বেসরকারি মাধ্যমে পরিচালিত হত। এই প্রকল্পে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রায় ৩০০টি স্কুল তৈরি হয়েছিল। ঠিক এই জায়গাতেই উঠছে দুর্নীতি অভিযোগ।
নিয়মানুযায়ী, একটি বেসরকারি সংস্থা ৪০টির বেশি স্কুলের বরাত পাবে না। অথচ সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, মলয় পিট ২০১৮ সালে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অনুব্রতর মধ্যস্থতায় গোটা রাজ্যের প্রায় ১৪০টি স্কুলের টেন্ডার পেয়েছেন। স্বাধীন, গোবিন্দুর শেফালি সমাজসেবা সমিতি, সতীর্থ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে একাধিক এজেন্সি রয়েছে মলয়ের। এই এজেন্সি গুলির নাম দিয়ে শুধুমাত্র বীরভূমেই ৪৮টি স্কুলের এনএসকিউএফ-র টেন্ডার পেয়েছে মলয়।
শুধু তাই নয়, শিক্ষা দপ্তর থেকে এনএসকিউএফ বাবদ যে অর্থ কারিগরি দপ্তরে আসে, কারিগরি দপ্তর তা বেসরকারি এজেন্সিকে দেয়। সেই বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে অনুব্রত-মলয়ের বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে বীরভূমের একটি স্কুলে বৃত্তিমূলক প্রকল্পে যুক্ত থাকা এক শিক্ষক জানান, "সরকারি টাকার নয়-ছয় হয়েছে। টাকা গেছে নেতার পকেটে। সব অনুষ্ঠানে ওই নেতাকে দেখা যেত মলয় পিটের সাথে। আর সেই ঘনিষ্ঠতাকে হাতিয়ার করেই আমাদের ওপরে চলছে হুমকি। ৭-৮ মাস মাইনে বন্ধ। এমনকি বৃত্তিমূলক এই প্রকল্পের শিক্ষকদের জোর করে মলয় পিটের লোকজন তাঁদের বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজে কাজ করতে বাধ্য করছে।"
পাশাপাশি, নিজের সংস্থার লোকদের বিনা পরীক্ষায় অবৈধভাবে এনএসকিউএফ-এ নিযুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে মলয় পিটের বিরুদ্ধে। চাকরি পিছু প্রায় তিন থেকে দশ লাখ টাকা তোলার অভিযোগও উঠেছে। সেক্ষেত্রে কালেকশন এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন পদবী মুখার্জী নামের এক ব্যক্তি, যিনি অনুব্রত-মলয়ের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন