"পুলিশের হাতে পায়ে ধরেছি, তবুও ওরা মেরেছে। অকথ্য নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করেছে। ছেলে পুলিশ গলায় বুট পরা পা চেপে ধরে রেখেছিল। আমি বলছিলাম খুব ব্যথা হয়েছে একটু মলম দেবেন, ওরা দেয়নি। এক মহিলা পুলিশকে জল চেয়েছিলাম, ভীষণ জল তেষ্টা পেয়েছিল। ওরা বললো, জল দেব না। পেচ্ছাব করছি তোর মুখে, পেচ্ছাব খা। আমি বললাম আপনি খান। সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে আর একজন পুলিশ এসে লাঠি দিয়ে আবার প্রচন্ড মারলো আমায়।" জেল থেকে বেরিয়েই থানার মধ্যে তাঁর উপর হওয়া নৃশংস অত্যাচারের বর্ণনা দিচ্ছিলেন আরজুনা বিবি। সেইসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি, অনাদি সাহু সহ অনান্য নেতৃত্বরা। আরজুনা বিবির মুখে বিবরণ শুনতে শুনতে এঁরা সকলেই শিউরে উঠেছিলেন।
মঙ্গলবার জামিন পান ৩১ বছর বয়সী গরীব গৃহবধূ আরজুনা বিবি। গত শুক্রবার আবাস যোজনায় হওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে নন্দকুমারের বিডিওকে ডেপুটেশন দিতে যাওয়ার সময় গ্রেফতার করা হয় আরজুনা বিবিকে। সিপিআইএমের ডাকে হওয়া এই বিক্ষোভ মিছিল থেকে আরও ১৭ জনকে আটক করা হয়েছিল। যাদের মধ্যে ৭ জনকে ছেড়ে দিয়ে আরজুনা বিবি সহ বাকি ১০ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা সহ চারটি জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। মঙ্গলবার ব্যক্তিগত ২ হাজার টাকার বন্ড এবং সপ্তাহে ২ দিন করে থানায় হাজিরা দেওয়ার শর্তে তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন তমলুক জেলা আদালতের মুখ্য দায়রা বিচারক।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জামিন পেয়ে বেরিয়েই শুক্রবার রাতে তাঁর উপর হওয়া অত্যাচারের বিবরণ দিচ্ছিলেন আরজুনা বিবি। শাড়ি খুলে বিবস্ত্র করে উরু, কোমরে পুরুষ পুলিশ লাঠি দিয়ে মেরেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সিপিআইএম নেতৃত্বের সামনে অত্যাচারের বিবরণ দিতে গিয়ে মাটিতেই বসে পড়েন তিনি। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না। এই মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর।
ঘর নেই আরজুনা বিবির। তাঁর স্বামী ইটভাটার শ্রমিক। নন্দকুমার ব্লকের শীতলপুর পঞ্চায়েত এলাকায় গিরিচক গ্রামের বাসিন্দা আরজুনা বিবি। ঘর বলতে যা বোঝায় তা নেই। নোনা ধরা ইটের চারটে দেওয়াল, তাও হেলে পড়েছে। উপরে টালি আর ত্রিপল দিয়ে ঘেরা। এতো ছোট ঘর যে সোজা হয়ে সেই ঘরে ঢোকা যায় না। এই আরজুনা বিবির নাম নেই প্রধান মন্ত্রী আবাস যোজনা তালিকায়। তিনবার আবেদন করেও ঘর পাননি তিনি। শুক্রবার সিপিআইএমের ডাকে অযোগ্যদের নাম বাদ দিয়ে যোগ্যদের নাম তোলার দাবিতে নন্দকুমার ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন আরজুনা বিবি সহ অন্যান্যরা। সেই বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্মম লাঠিচার্জের অভিযোগ ওঠে। মহিলাদের উপরও আক্রমণ করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে আরজুনা বিবির শাড়ি খুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে এক পুলিশ। সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় আরজুনা বিবি সহ অন্যান্যদের।
আরজুনা বিবির উপর হওয়া অত্যাচারের বিবরণ ও সমগ্র পরিস্থিতির কথা জানিয়ে এবং অভিযুক্ত আধিকারিকদের শাস্তির দাবি জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মানবাধিকার কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন আরজুনা বিবি ও তাঁর স্বামী শেখ সোনু।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন