দীর্ঘ ১৩ বছর পর ফের লালগড়ে মিছিল করলো সিপিআইএম। ২০০৯ সালের পর ঝাড়গ্রামের সন্ত্রস্ত এই অঞ্চলে মিছিল করতে পারেনি সিপিআইএম। রাজ্যের শাসক দলের দাপটে এই অঞ্চলে করা সম্ভব হয়নি কোনো দলীয় কর্মসূচীও। এবার সেই লালগড়েই সিপিআইএম লালগড় এরিয়া কমিটির ডাকে দৃঢ় পদক্ষেপে গ্রামের কয়েকশো মানুষকে নিয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পরিক্রমা।
২০০৯ সালের ১১জুন লালগড়ে তৃণমূল মাওবাদী বাহিনির হাতে খুন হন সিপিআই(এম) কর্মী শালকু সরেন। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। তাঁকে হত্যা করে ধরমপুর পার্টি অফিসের সামনে ফেলে রাখা হয় টানা পাঁচ দিন। মৃতদেহ পরিবারকেও দাহ করতে দেওয়া হয়নি। মৃতদেহের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি শালকু সরেনের বৃদ্ধা মা ছিতামণি সরেনকেও।
১১জুন শালকু সরেনের হত্যার পর ১৪ জুন খুন হয়ে যান দীনবন্ধু সোরেন, প্রবীর মাহাতো, ঝন্টু পাত্র, রাখহরি মণ্ডল, কেশব মানা, ধীরাজ মানা, মোহন সিং, সঞ্জয় মাহাতো, দেবব্রত সোরেন, নাড়ু সামন্ত, অসিত সামন্ত, তপন দাঁ, সুনীল দাঁ। যাদের মধ্যে প্রথম চার জনের মৃতদেহ পাওয়া গেলেও বাকীদের দেহের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। এই সিপিআইএম কর্মীরা এখনও নিখোঁজ।
মঙ্গলবার লালগড় এরিয়া কমিটির সম্পাদক অলক দাস পিপলস রিপোর্টারের প্রতিনিধিকে জানান, ২০০৯ সালের পর থেকে শহীদদের স্মরণে কোনো সভা করতে পারেনি সিপিআইএম। প্রতি বছরই শহীদদের স্মরণ করা হয়, কিন্তু এই নির্দিষ্ট দিনে করা হয়না। যদিও এবছর ৩ জুন ঝাড়গ্রামে হওয়া এক দলীয় সভায় ধরমপুর এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে ১৪ জুনেই শহীদ স্মরণ সভা করার দাবি ওঠে।
মঙ্গলবার ১৪ জুন শহীদের স্মৃতিতে মাল্যদান করে একটা মিছিল করা হয়। ধরমপুরের সবুজ সংঘ মাঠ থেকে শুরু হয় মিছিল। বিডিও অফিস-সবজি মার্কেট পর্যন্ত গিয়ে ফের মাঠেই ফিরে আসে মিছিল। প্রায় ৩ কিমি মিছিলের পর এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র, প্রাক্তন সাংসদ পুলিন বিহারী বাস্কে সহ অন্যান্য স্থানীয় এবং জেলা নেতৃত্ব।
লালগড় এরিয়া কমিটির সম্পাদক আলোক দাস আরও জানান, পরিস্থিতির দ্রুত বদল হচ্ছে। মানুষের আস্থা ফিরছে নিশ্চিতভাবে। আমরা যতটা ভেবেছিলাম তার থেকে বেশি ফিরেছে আস্থা। কিন্তু এখনও আমাদের পুরো দলীয় নেতৃত্বই নেতাই কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে জেলবন্দী। এই কারণে অনেকে আমাদের সাথে থাকতে চাইলেও সেভাবে ভরসা করতেও পারছে না। তাঁদের মনে ভয় যে, দল যদি নেতৃত্বদের মুক্ত করতে না পারে, তাহলে আমাদের কিছু হলে কে দেখবে। কারণ শাসকদল তো নতুন নতুন মামলা দায়ের করবেই। তবুও এখন দল আগের তুলনায় অনেকটাই ভালো জায়গায় এসেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন