৭৮ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন সিঙ্গুরে শিল্পের দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম মুখ তথা সিপিআইএম নেতা সুহৃদ দত্ত। বৃহস্পতিবার সিঙ্গুরে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রবীণ সিপিআইএম নেতা।
দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন সুহৃদ দত্ত। গোটা শরীরে রাসায়নিক বিষক্রিয়ার কারণে ঘা হয়ে গিয়েছিল। তার সাথে বিভিন্ন বার্ধক্য জনিত সমস্যাও ছিল। সিঙ্গুর ১ নম্বর পঞ্চায়েতের অপূর্বনগরে বাড়ি সুহৃদ দত্তের। সেই বাড়িতেই ছিলেন তিনি। সিপিআইএম হুগলী জেলা কমিটির প্রাক্তন সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে দলের অন্দরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সিঙ্গুরের শিল্প আন্দোলনের সময় একটি নাম গোটা রাজ্যবাসীর কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। তিনি সুহৃদ দত্ত। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সিঙ্গুরে টাটার কারখানা নির্মাণের বিরোধিতা করেছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সিপিআইএম নেতা সুহৃদ দত্ত। তিনি তৎকালীন সিঙ্গুর জোনাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন।
সিঙ্গুরে টাটার শিল্প গড়ার জন্য অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন সুহৃদবাবু। সকল গ্রামবাসীদের বাড়ি বাড়ি ছুটে গিয়েছিলেন। বেকার যুবক যুবতীদের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্রামের মানুষদের বোঝাতে থাকেন কেন সরকারকে জমি দান করা উচিত।
সিঙ্গুরে শিল্প আন্দোলনের সময় তাপসি মালিক ধর্ষণকাণ্ডে সুহৃদ দত্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মমতা ব্যানার্জি। ঘটনার তদন্ত ভার যায় সিবিআই-র হাতে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, তাপসি মালিককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। ২০০৭ সালে সিবিআই গ্রেফতার করে সুহৃদকে। জেলের মধ্যে সুহৃদ দত্তের শরীরে ইনজেকশন দিয়ে নারকো টেস্টও করা হয়। তারপর থেকেই প্রবীণ সিপিআইএম নেতার গোটা শরীর দগদগে ঘা-এ ভরতি হয়ে যায়। তাঁকে ২০০৯ সালে জামিন দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেলে সেখানেও ধাক্কা খায় সিবিআই।
সুহৃদ দত্তের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছিল তা পরিষ্কার হয়ে যায় তাপসি মালিকের বাবার কথায়। রাজ্যে পালাবদলের বহু বছর পর তাপসি মালিকের বাবা স্বীকার করেন তাঁর মেয়ের ধর্ষণ ও খুনে সিপিআইএম-র কোনো ভূমিকা নেই।
সুহৃদ দত্তের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন বাম নেতৃত্ব। বাম ছাত্রনেতা সৃজন ভট্টাচার্য সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, "সিপিআই(এম) আমাকে ২০২১ সালে নির্বাচনের কাজে সিঙ্গুরে পাঠানোর আগে থেকেই সুহৃদদার সাথে আমার পরিচয়। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে প্রেরণা হয়ে থেকেছেন আমার মতো বহু মানুষের। তাঁর পরিবার, স্বজন ও কমরেডদের সমবেদনা জানাই। সিঙ্গুরে দলমত নির্বিশেষে অগণিত মানুষের অভিভাবক ছিলেন সুহৃদদা"।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে সিঙ্গুর থেকে সিপিআইএম-র টিকিটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সৃজন ভট্টাচার্য।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন