আবাস যোজনায় অযোগ্যদের নাম বাদ দিয়ে যোগ্যদের নাম তোলার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন সিপিআইএম কর্মীরা। বিডিও ডেপুটেশন নিতে রাজি না হওয়ায় বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যার পরও চলছিল বিক্ষোভ। অভিযোগ, আচমকা সেই বিক্ষোভের উপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। স্থানীয় সিপিআইএম নেতৃত্ব জানিয়েছেন, এই ঘটনায় প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছেন। মাথা ফেটেছে একাধিক জনের।
বলপূর্বক স্থানীয় পার্টি অফিসে ঢুকে জেলা সম্পাদক সহ প্রায় ২০ জন সিপিআইএম নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ বলে সূত্রের খবর। সিপিআইএমের অভিযোগ, মহিলা কর্মীদের শ্লীলতাহানি করেছে পুলিশ। এই ঘটনার বিরুদ্ধে রাজ্যের সর্বত্র প্রতিবাদে নামার ডাক দিয়েছে রাজ্য সিপিআইএম।
আবাস যোজনায় গ্রামের বহু গরীব মানুষের নাম নেই। তার বদলে শাসকদলের নেতা ও ঘনিষ্ঠদের নাম রয়েছে, যাঁরা প্রত্যেকেই একতলা বা তারও অধিক তল বিশিষ্ট পাকা বাড়ির মালিক। যোগ্যদের তালিকায় নাম তোলার দাবিতে শুক্রবার দুপুরে সিপিআইএম-এর ডাকে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার ব্লকের সামনে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় গ্রামবাসীরা। বিডিও ডেপুটেশন জমা নিতে না চাইলে, বিক্ষোভের ঝাঁঝ বাড়ান আন্দোলনকারীরা। অন্ধকার নেমে এলেও বিক্ষোভ চলতে থাকে। সিপিআইএমের অভিযোগ, অন্ধকার নামার পরই আচমকা বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালায় পুলিশ। বেধড়ক লাঠিচার্জ করা হয় বিক্ষোভকারীদের উপর।
মিছিলের নেতৃত্বে দেওয়া পরিতোষ পট্টনায়ককে বুকে, পেটে লাথি মারতে মারতে পুলিশ ভ্যানে তুলতে দেখা যায়। পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হন আরো একাধিক নেতা কর্মী। মহিলাদের উপরও আক্রমণ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে মহিলাদের বিবস্ত্র করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ঘটনার সময় বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ব্লক অফিসেই উপস্থিত ছিলেন।
এরপর নন্দকুমার থানার ওসি মনোজ ঝার নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী নন্দকুমার সিপিআইএম পার্টি অফিসে হানা দেয়। সেখান থেকে সিপিআইএম জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি সহ একাধিক নেতাকে বলপূর্বক টেনেহিঁচড়ে ভ্যানে তোলে পুলিশ। সিপিআইএম নেতৃত্ব জানিয়েছে, প্রায় ২৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচ জনের আঘাত অত্যন্ত গুরুতর। শেখ হাকিম, সামিদ আনসারি নামে দুজনের মাথা ফেটেছে। চারজন নিখোঁজ রয়েছে ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। আহতদের নন্দকুমার খেজুরবেড়িয়া হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
সিপিআইএমের অভিযোগ, এই ঘটনার পিছনে শাসকদলের মদত রয়েছে। বিডিওর সাথে যোগাযোগ রয়েছে শাসক দলের নেতাদের। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এক বিবৃতি দিয়ে মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, ‘‘শুক্রবার দুপুরে নন্দকুমারে আবাস যোজনায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিডিও অফিসে বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের নির্মম লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন বহু কমরেড। পরবর্তীতে পার্টি অফিস থেকে জেলা সম্পাদক ও সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সহ বেশ কয়কজন কমরেডকে ধরা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে এর প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন অবিলম্বে।“
তিনি আরও বলেন, “আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হওয়া মানুষের ওপর পুলিশ দিয়ে অত্যাচার করছে বর্বর তৃণমূল সরকার। এর বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রতিবাদ হোক। পুলিশের এই নির্মম আচরণ জনগণের সামনে আবারও স্পষ্ট করে তুলে ধরা প্রয়োজন।“
এদিনের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ পুলিশ এবং সিভিক পুলিশের নাম করে বাইক বাহিনী এদিন হামলা চালিয়েছে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে বাইকের হেলমেট পরে একদল লোক সিপিআই(এম) কর্মীদের উপর আক্রমণ করছে। এরা কারা? সম্পূর্ণ বিনা প্ররোচনায় এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে।“
ধৃত সিপিআই(এম) নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ আবাস দুর্নীতি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। এই দুর্নীতির সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং বিডিওরা সরাসরি যুক্ত। তাই বিডিওকে আগে থেকে জানানো থাকলেও তিনি ডেপুটেশন গ্রহণের প্রয়োজন বোধ করেননি। উল্টে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির নেতৃত্বে ব্লক অফিসে বহিরাগত দুষ্কৃতি জড়ো করা হয়েছিল। টাকা লুঠ করবে আর জনগণ বাধা দেবে না? এই লড়াই আরও বাড়বে।“
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন