রেলে চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরূপের অভিযোগে গ্রামবাসীদের হাতে বেধড়ক মারধরল্ল খেলেন তৃণমূল নেতা। অভিযুক্তের নাম দিলীপ পাত্র। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায়। গাছে বেঁধে স্থানীয় গ্রামবাসীরা মারধর করেছে তাঁকে।
দিলীপ পাত্র তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ডেবরা ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে রেলে চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা। যার জেরে শনিবার তাঁকে একটি গাছে দড়ি দিয়ে বেঁধে লাঠিপেটা করলেন ডেবরা এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। ডেবরার ৩ নম্বর অঞ্চলের সত্যপুর এলাকায় একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে গাছে বাঁধা হয় তৃণমূল নেতাকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশ কয়েক জন আদিবাসী ছেলেমেয়েকে রেলে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলেন দিলীপ। এরপর দিনের পর দিন কাটলেও কারও চাকরি হয়নি। বেশ কয়েক জন টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত করেননি তৃণমূল নেতা। সেই কারণে বাধ্য হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘রেলে চাকরি দেওয়ার নাম করে আমার আত্মীয়ের কাছ থেকে আড়াই বছর আগে পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন দিলীপ। চাকরি তো হয়ইনি, উল্টে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে এক মাস আমার আত্মীয়ের টাকায় ওরা খাওয়াদাওয়া করেছে। টাকা চাইলে আজ দেব, কাল দেব বলে এড়িয়ে গিয়েছে।’’
তিনি আরও জানান, ‘‘জমি বিক্রি করে চাকরির জন্য টাকা দেওয়া হয়েছিল। যে চেক দিয়েছিল তা বাউন্স হয়ে যায়। তাই আজ ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের পক্ষ থেকে ওঁকে তুলে আনা হয়।’’ ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের ব্লক সভাপতি গোপাল মুর্মুর দাবি, ‘‘এ রকম অনেকের কাছ থেকে উনি টাকা নিয়েছেন।’’
চাপের মুখে পড়ে অবশেষে তৃণমূল নেতা স্বীকার করে নেন যে তিনি চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে দিনের পর দিন টাকা নিয়েছিলেন। দিলীপের দাবি, কলকাতায় ‘একজন’ তাঁকে বলেছিলেন যে টাকা দিলে চাকরি পাইয়ে দেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু সে চাকরি দিতে পারেনি। যে টাকা নিয়েছিলাম সে সব ওকে দিয়েছিলাম। চাকরি না হওয়ায় কলকাতার ওই লোককে টাকা ফেরত দিতে বলেছিলাম। কিন্তু সে এক টাকাও ফেরত দেয়নি।’’ তবে অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিটির সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি দিলীপ।
এই ঘটনার পর তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ব্লকের বাইরে আছি। একটা ঘটনা হয়েছে বলে শুনেছি। পুলিশকে বলেছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। আর্থিক লেনদেনের ব্যাপার দিলীপ বলতে পারবে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মারধরের খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থল থেকে দিলীপকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে, দু'পক্ষের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন