সিঙ্গুরে কৃষকদের জমি ফেরত দিতে উদ্যোগী হল সিপিআইএম। সিঙ্গুরের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে জমি ফেরত না পাওয়া কৃষকদের তালিকা সংগ্রহ করছে সিপিআইএম কর্মীরা।
বর্তমান রাজ্য সরকারকে ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল অধিগ্রহণ করা জমি চাষযোগ্য করে কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া। সিপিআইএমের অভিযোগ, চাষযোগ্য করে ফেরানো তো দূরের কথা, এমনি জমিই ফেরত পাননি বহু কৃষক।
সেই জমি ফেরাতে রাস্তায় নামল সিপিআইএম। জনসংযোগ কর্মসূচিতে সিঙ্গুরের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে সিপিআইএম কর্মীরা জমিদাতাদের একটি ছাপানো আবেদন পত্র প্রদান করছেন, যেখানে লেখা আছে - আমি আমার চাষযোগ্য জমি ফেরত পেতে চাই। আবেদনপত্রে কৃষকদের নাম, ঠিকানা, কোন মৌজায় উক্ত কৃষকের কত জমি রয়েছে, জমির দাগ ও খতিয়ান নম্বর জানতে চাওয়া হয়েছে। কৃষকদের এই তথ্য জানিয়ে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। সিপিআইএম দলীয় সূত্রে খবর, পার্টির যুব সংগঠন - DYFI-এর কর্মীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে জমি ফেরত না পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করছেন এবং তাঁদের এই আবেদন পত্র দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। স্থানীয় এক DYFI কর্মী জানিয়েছেন, "কেউ সঙ্গে সঙ্গে জমির পরিমাণ জানিয়ে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করছেন। আবার কেউ ফর্ম রেখে দিচ্ছেন, পরে পূরণ করে নিজেই জমা দিয়ে যাচ্ছেন।"
এছাড়াও আরও একটি বিষয়ে স্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি করছেন বাম যুবরা। কারখানার জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ১০ বিঘাতে সরকারের সহযোগিতায় মাছের ভেড়ি তৈরীর কাজ শুরু হয়েছিল সম্প্রতি। DYFI এর বিক্ষোভের জেরে আপাতত সেই কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। এই ভেড়ি প্রকল্পের বিরোধিতা করেও স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে। DYFI-এর দাবি এই কর্মসূচিতেও মানুষের সাড়া পাচ্ছেন তাঁরা। এই সমস্ত আবেদনপত্র আগামী মাসে সিঙ্গুরের ব্লক প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের ক্ষেত্রে সিঙ্গুরের ভূমিকা ছিল অন্যতম। ২০০৬ সালে সিঙ্গুরের মাটিতে টাটা গোষ্ঠীর ছোট গাড়ি তৈরীর কারখানা গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের জেরে অর্ধেক তৈরি হয়ে যাওয়া কারখানা ভেঙে দিতে বাধ্য হন রতন টাটা। কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। যদিও এখন জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় মোট ১৩ হাজার ১০৩ জন কৃষকের মধ্যে মাত্র ২৩৩ জন বৈধ জমির মালিক সেই সময় জমি দিতে অস্বীকার করেছিলেন। এই অনিচ্ছুক কৃষকদের মোট জমির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪০ একর।
অধিগৃহীত জমি নিয়ে মামলা আদালতেও যায়। ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট সুপ্রিমকোর্ট রায় দেয় কৃষকদের জমি চাষযোগ্য করে ফেরত দিতে হবে। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী সিঙ্গুরে গিয়ে ওই সমস্ত জমিতে সরষের বীজ ছড়িয়ে ছিলেন এবং সাথে জমি ফেরতের কথাও বলেছিলেন। তাঁর ঘোষণা মতো জমি ফেরত নেওয়ার শিবিরও বসেছিল। কিন্তু জমি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। এখনও বহু কৃষক জমি ফেরত পাননি। সেই জন্যই জমি ফেরাতে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে সিপিআইএম।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন