শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করেছে ইডি। তাঁকে ১০ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই নিয়েই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্রমশ চাপ দিচ্ছে বিরোধীরা।
সোমবার, রাজ্যের মন্ত্রীসভা থেকে শিল্পমন্ত্রীর অপসারণের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। চিঠিতে সরাসরি পার্থকে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে তিনি লিখেছেন, "রাজ্যের বর্তমান শিল্প-বাণিজ্য ও পরিষদীয় দফতরের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৪-২১ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, সেই সময়ই রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনা সামনে এসেছে। আদালতের নির্দেশে সেই দুর্নীতি মামলার যে তদন্ত হচ্ছে, তা পশ্চিমবঙ্গের সব মানুষই জানেন। তাই তাঁকে অবিলম্বে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করুন।"
পার্থ প্রসঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র কটাক্ষ করে একের পর এক বিবৃতি দিচ্ছেন কখনও সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আবার কখনও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
মমতাকে নিশানা করে সেলিম বলেছেন, "যে টাকা উদ্ধার হয়েছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। যথেষ্ট সময় অতিবাহিত করার পর, অজস্র টাকা দেশে বিদেশে পাচার হওয়ার পরেও, হাত দিতেই এই পরিমাণ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এই টাকা আসলে লুঠের টাকা। তোলাবাজিসহ অসহায় চাকরিপ্রার্থীদের থেকে মোটা ঘুষ নেওয়া টাকা সর্বত্র জমা করা হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী টাকা বিলোবার গল্প শোনান আর দেশের প্রধানমন্ত্রী 'ক্যাশলেস ইকোনমির' বাণী ছড়াচ্ছেন। অন্যদিকে সেই নগদ টাকার পাহাড়ের ছবিতে তৃণমূলের দুর্নীতির হাত ধরে ফুটে উঠছে এই রাজ্যে।"
তিনি আরও বলেন, "সচিব শব্দটা কেন বলবো? মহাচোর বলা যায়। মদন যখন ধরা পড়েছিল তখন মমতা ব্যানার্জী নিজেই বলেছিলেন 'আমরা সবাই চোর!'। চোরেদের সরকারে এখন বিভিন্ন রকমের চোর আছে। চোর, বড়চোর, মাঝারি চোর, মহাচোর, সততার প্রতীকওয়ালা চোর সবাই আছে। নামগুলোই শুধু প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, মুখ্যসচিব করে দেয়। নামে কী এসে যায়? ওগুলো ডাক নাম।"
সিপিআই(এম) সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, "শুধু টাকা নয়, আমরা জানতে পেরেছি যে বিদেশি মুদ্রাও পাওয়া গেছে। সোনা-দানা সহ কত সম্পত্তি পাওয়া গেছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু এটাও কিছুই না। আমি আগেও বলেছি, আজও বলছি, যদি তদন্ত ঠিকমতো হয়, শাসকদলের বহু নেতা, মন্ত্রী, কাউন্সিলর তাঁদের বাড়িতে যদি তদন্ত করা হয় তাহলে হাজার হাজার কোটি টাকা বেরোবে। এই কয়েক বছরে এরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে এমনভাবেই প্রতারিত করেছে। পশ্চিমবঙ্গের ধনসম্পদকে নষ্ট করেছে শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থে।"
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে মমতাকে ট্যুইট করে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, "মুখ্যমন্ত্রী এখন পার্থর সমস্ত দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। দায় ঝেড়ে ফেলা অত সহজ নয়। কারণ বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী ২৯৪ টি কেন্দ্রে নিজে প্রার্থী বলে ভোট চেয়েছিলেন। তাই নিজে প্রার্থী বলে যখন ভোট চেয়েছিলেন, তেমন এই দুর্নীতির দায় তাঁকে নিতেই হবে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন