নিজের বাড়ির কাছে বদলি নিতে গেলে রাজ্য সরকার বা মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করা যাবে না। এমনই নিদান দিলেন তৃণমূলের বিধায়ক কথা চিকিৎসক নির্মল মাঝি। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর শহরে ইন্টিগ্রেটেড আয়ুষ হাসপাতালে হোমিওপ্যাথির একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
সেখানেই তিনি ঘোষণা করেন যে, ‘চিকিৎসক, নার্সিং, প্যারামেডিক্যাল স্টাফ, টেকনিশিয়ান- যাঁর বাড়ি যেখানে, পোস্টিং হোক সেখানে, এই আওয়াজ আমিই তুলেছি। আর এখন সেটাই বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করেন, কথায়-কথায় পান থেকে চুন খসলে জিন্দাবাদ-জিন্দাবাদ করে সরকারের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করেন, এই সুবিধা তাঁদের জন্য নিশ্চয়ই নয়।’
নির্মল মাজির এই ঘোষণার পরে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, তার পদমর্যাদা নিয়ে। কারণ তিনি শুধুই বিধায়ক। তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী নন, স্বাস্থ্যকর্তাও নন। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কাদের, কেন, কোথায় বদলি করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভাবেই প্রশাসনিক। সেই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত তিনি নেন কীভাবে?
নির্মল অবশ্য পরিস্থিতি বুঝে ব্যাখ্যা দিয়েছে , ‘আমি কিছু ঠিক করিনি বা ঘোষণা করিনি। হেলথ স্ট্যান্ডিং কমিটির তরফে সরকারকে বদলি নীতির ব্যাপারে কিছু প্রস্তাব দিয়েছি।’ তাঁর অভিযোগ, ‘বিরোধী দলের কয়েকজন চিকিৎসক-কর্মী ইচ্ছাকৃত ভাবে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র করে সরকারি পরিকাঠামোকে খারাপ দেখাতে চাইছেন। শাস্তি হিসাবে তাঁদের দূরে বদলি করা উচিত, তেমনই তৃণমূলের সমর্থক ডাক্তার কাজ না করে হাসপাতালে শুধু রাজনীতি করলে, তাঁদেরও দূরে বদলি করা দরকার।’
সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগে বদলির ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ হয়। এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নির্মলবাবুর এই মন্তব্যে পর তা আরও একবার প্রমাণিত হল বলে দাবি বিরোধীদের। চিকিৎসকদের বামপন্থী সংগঠন বলে পরিচিত ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর বক্তব্য , ‘আমরা তো আগেই বলেছিলাম, তৃণমূল জমানায় স্বাস্থ্যে বদলি ও নিয়োগে চূড়ান্ত রাজনীতি হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, নির্মল মাজির এই মন্তব্য ঘিরে উঠে এসেছে চিকিৎসক অবন্তিকা ভট্টাচার্যের কথা। দীর্ঘ আট বছর পশ্চিম মেদিনীপুরের হাসপাতালে চাকরি করেছেন। তারপর অসুস্থ ছেলের জন্য বেহালায় নিজের বাড়ির কাছে বদলি চান। কিন্তু তা মেলেনি।
গত বছর আগস্ট মাসে এই ইস্যুতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে গায়ে আগুন দিয়েছিলেন। ওই ঘটনার মাত্র আধ ঘণ্টা আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাস্থ্য দফতরের বদলি-নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি এবং রাজনীতির অভিযোগ তুলে পোস্ট করেন। ঘটনার দু’সপ্তাহ পরে মৃত্যু হয় তাঁর।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন