আগেও বিস্ফোরণ হয়েছে ভানু বাগের বাজি তৈরির কারখানায়, যাতে ভানুর ভাই এবং তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে এগরার খাদিকুল গ্রামে ভানু বাগের বাজি তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণের পর একের পর এক চাঞ্চাল্যকর তথ্য সামনে আসছে।
স্থানীয় সূত্র ও একাধিক মিডিয়া রিপোর্ট মারফত জানা গেছে, বাজি কারখানার মালিক কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু বাগ এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। স্থানীয় এক বর্গাদার দয়ানিধি মাইতির কাছ থেকে জোর করে ১ বিঘা ৫ কাঠা জায়গা দখল করে এই বাজি কারখানাটি তৈরি করেন তিনি। ২৫ জন কর্মী কাজ করতেন এখানে। এর মধ্যে অধিকাংশই মহিলা।
গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজি তৈরি করছেন ভানু। রংবেরঙের তুবড়ি, গাছবোমা, ছুঁচোবাজি, রঙিন প্যারাডাইস নানারকম চোখধাঁধানো বাজি তৈরি করতেন তিনি। ভিন রাজ্যেও যেত তাঁর বাজি। একাধিক পুরস্কারও জিতেছেন তিনি বাজি তৈরির জন্য।
২০০৮ সালে সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্দল সদস্য ছিলেন ভানু। ২০১১ সালে রাজ্য তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে শাসকদলের নেতাদের সাথে ভানুর ওঠাবসা শুরু হয় এবং দাপট বাড়ে তাঁর। ২০১৩ সালে তৃণমূলের বুথ সভাপতি হন তিনি। গোটা এলাকায় তিনি সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। বিশেষত ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভানু বাগের বাহিনী বোমা বন্দুক নিয়ে ভোট লুট করেছে, বিরোধীদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ।
আগে গ্রামের বাড়িতে বাজি তৈরি করতেন ভানু। বছর পাঁচেক আগে সেখানে বিস্ফোরণ হয়। এতে ভানুর ভাই এবং তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। সে বার ঘটনার পর কিছু দিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন ভানু। কিছু দিনের মধ্যেই অবশ্য ফের স্বমহিমায় ফেরেন। এরপর এখানে বাজি তৈরি করা শুরু করেন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই বাজি কারখানার আড়ালে বোমা তৈরি হত। এবং পুলিশ সব জানে। ৫০ হাজার টাকা করে কমিশন নিত পুলিশ। যার জেরে এলাকা জুড়ে ছিল ভানুর দাপট।
মঙ্গলবার দুপুরে এই কারখানায় বিস্ফোরণের জেরে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত হয়েছেন ১৪ জন। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বিস্ফোরণের সময় ভানু বাগ নিজেও ছিলেন ঘটনাস্থলে। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে তাঁরা ছুটে এসে দেখেন আহত অবস্থায় গাড়িতে উঠে পালিয়ে যাচ্ছেন ভানু বাগ। তাঁর হাতে আঘাত লেগেছে। ওডিশার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে তাঁর চিকিৎসা চলছে বলে দাবি করেছেন অনেকে।
গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, কমপক্ষে পনেরো জনের মৃত্যু হয়েছে, কিছু মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন মহিলা। রাত পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে আটজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন অম্বিকা মাইতি, শক্তিপদ বাগ, কবিতা বাগ, মাধবী বাগ, জয়ন্ত জানা, বাপন মাইতি, মিনতি মাইতি ও শ্যামাশ্রী মাইতি। বাকি দুজনের শরীর এতোটাই পুড়ে গেছে যে শনাক্ত করা যায়নি। এঁদের প্রত্যেকেরই বাড়ি এই খাদিকুল গ্রামে।
নিহত মাধবী বাগের স্বামী সঞ্জীব বাগ স্ত্রীর পোড়া দেহের সামনে বসে বলেন, ''আমরা সকলেই খুব গরীব। দু'জন উপার্জন না করলে সংসার চালানো কঠিন। তিন-চার ঘন্টা কাজ করলে তিনশো টাকা মজুরি পেত। স্ত্রীকে শুধু তারাবাজিই তৈরি করতে হত। এখন তো সব শেষ হয়ে গেল।''
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন