মুখ্যমন্ত্রীর একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবার বিক্ষোভের পথ বেছে নিলেন চা বাগানের শ্রমিকরা। চা শ্রমিকদের জন্য রাজ্যের ঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি বৃদ্ধি মানতে নারাজ চা শ্রমিকদের যৌথ সংগঠন জয়েন্ট ফোরাম।
গত বৃহস্পতিবার, উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলিতে একটি যৌথমঞ্চ করে বিক্ষোভসভার আয়োজন করেছিল চা শ্রমিকরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চা শ্রমিকদের মাত্র ৩০ টাকা অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি ঘোষণার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় তাঁরা।
মূলত চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দ্রুত চালু করা এবং জমির পাট্টা বিলি করা ইত্যাদি বিভিন্ন দাবি নিয়েই বিক্ষোভ কর্মসূচীর আয়োজন করেছিল চা শ্রমিকরা। উত্তরবঙ্গের প্রতিটি চা বাগানের গেটে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। বিক্ষোভ সভায় চা শ্রমিকদের বিভিন্ন ইউনিয়নের যৌথমঞ্চ ফোরামের ডাকে এই বিক্ষোভ সভায় অংশ নেয়। মমতা ব্যানার্জী একতরফাভাবে মালিকপক্ষকে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন এই অভিযোগে অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে চা শ্রমিকরা।
এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানে আয়োজিত বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের নেতা জিয়াউল আলম। সভায় তিনি অভিযোগ জানিয়ে বলেন, "বাগান মালিকদের কথায় মুখ্যমন্ত্রী ৩০ টাকা মাত্র মজুরি বাড়িয়েছেন। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাড়ে চার লক্ষ চা শ্রমিক ন্যূনতম মজুরির দাবি করছি। কেরালার সরকার, তামিলনাড়ুর সরকার, কর্ণাটকের সরকার সে রাজ্যে চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দিচ্ছে। আসাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করেও এখনও চালু করার সাহস দেখাতে পারেনি। আর এ রাজ্যের সরকার এখনও ন্যূনতম মজুরি ঘোষণাই করতে পারেনি।" তিনি আরও জানান, "দাবি না মানা হলে আগামী মাসের ৪ তারিখ থেকে চা বাগানের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করবেন।"
প্রসঙ্গত, চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো এবং তা দ্রুত চালু করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই পথে আছে জয়েন্ট ফোরাম। শ্রমিকদের লাগাতার আন্দোলনের জেরেই মজুরি নির্ধারণ কমিটি তৈরী হয়েছে। প্রায় ১৮টি বৈঠকের পর মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল ১ জানুয়ারী ২০২২ থেকে চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কার্যকর করা হবে। কিন্তু এখনও তা চালু করা হয়নি। শ্রমিকদের অভিযোগ, সরকার তাঁদের ন্যূনতম মজুরি দিচ্ছে না অথচ এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬ দফায় ইন্টিরিফ রিলিফ ঘোষণা করেছে। এতদিন ধরে অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা ঠিক করা হত শ্রমদপ্তরের মধ্যস্থতায় চা বাগানের মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথসভার মাধ্যমে।
মুখ্যমন্ত্রীর একতরফা ঘোষণার ফলে এবারের অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা সবচেয়ে কম। সেই কারণে বৃহস্পতিবারের সভায় চা শ্রমিকরা মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে যথেষ্ট ক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল। তাদের অভিযোগ, "মুখ্যমন্ত্রী মাত্র ৩০ টাকা কী করে ঘোষণা করলেন? এটা আমাদের অপমান। আমরা ন্যূনতম মজুরিই চাই।" তাঁরা আরও জানিয়েছে, "ট্রেড ইউনিয়ন, মালিকদের সঙ্গে শ্রম দপ্তরের আলোচনার সময় মুখ্যমন্ত্রী কেন ইন্টিরিম ঘোষণা করলেন?"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন