ডান হাতের কব্জি কেটে নিয়েছে স্বামী। কিন্তু কেড়ে নিতে পারেনি মনের জোর। শারীরিকভাবে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার শিকার হলেও মানসিক ভাবে যথেষ্ট সক্ষমতার পরিচয় দিলেন রেণু খাতুন। হাসপাতালের মধ্যেই বাম হাতে লেখা শুরু করলেন রেণু। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে রেণু।
নিজের অদম্য জেদের উপর ভর করে জীবন-যুদ্ধের হার না মানা লড়াইয়ে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন রেণু। সোমবার রেণুর স্বামী নৃশংসভাবে ঘুমের মধ্যে তার ডান হাতের কবজি কেটে নিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার হাসপাতালেই বাঁ হাত দিয়ে লেখা শুরু করেন রেণু খাতুন। রেণুর ইচ্ছে, তিনি সরকারি নার্সিং-এর চাকরি করবেনই। আর কি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে নার্সিং-এর কোর্স করেছিলেন রেণু খাতুন।
ঠিক কী ঘটেছিল? জানা গেছে, সরকারি চাকরি পাওয়ায় গত সোমবার স্ত্রী রেণু খাতুনের ডান হাতের কবজি কেটে নিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রামের বাসিন্দা শের মহম্মদ ওরফে সরিফুল শেখ। চাকরি পেয়ে রেণু যাতে তাকে ছেড়ে না চলে যায় সেই আশঙ্কায় শের মহম্মদ তার দুই বন্ধুকে সাথে এনে এই কুকীর্তি ঘটিয়েছে। সম্প্রতি, সরকারি নার্সিং চাকরির তালিকায় নাম বেরিয়েছে রেণুর।
রেণুর অভিযোগ, বাপের বাড়ি থেকে সোমবার রেণুকে নিয়ে আসার পর ঘুমের মধ্যে তাঁর স্বামী শের মহম্মদ তাঁকে বালিশ চাপা দেয় এবং তাঁর ডান হাতের কবজি কেটে নেয়। পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রাণে না মেরে শুধুমাত্র ভয় দেখানোর জন্য কম টাকায় ভাড়াটে গুণ্ডা এনেছিল শের মহম্মদ।
এই ঘটনার পর মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে রেণুর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। রেণুর সহকর্মীরা তাঁর পাশেও দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা জানান, রেণু অত্যন্ত ভালো এবং শক্ত মনের মেয়ে। রেণু জিতলেই অভিযুক্তদের উচিত শাস্তি হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছে রেণু, তাঁর পরিবার ও সহকর্মীরা। চাকরি যাতে পায় সেই জন্য স্বাস্থ্য দপ্তর এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদনও করেছে রেণু খাতুন।
ঘটনার তদন্তের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই রেণুর শ্বশুর-শাশুড়িকে সোমবার রাতে চাকতা বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করেছে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ। কিন্তু পালিয়ে বেড়াচ্ছিল শের। পূর্ব বর্ধমানের কোনও এক জায়গায় গা ঢাকা দিয়েছিল সে। তবে, এবার সেখান থেকেই মূল অভিযুক্ত রেণু খাতুনের স্বামী শের মহম্মদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি এই ঘটনার সাথে যুক্ত থাকার অপরাধে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন