এক বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৪ লক্ষের বেশি, নাম নথিভুক্ত করেও পরীক্ষায় বসছে না বহু

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক। পর্ষদের তথ্য অনুসারে নাম নথিভুক্ত করলেও শেষ পর্যন্ত মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে না ২ লক্ষ পরীক্ষার্থী। পর্ষদের দাবি, অতিমারির প্রভাবেই এমনটা হয়েছে।
রাজ্যে কমেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা
রাজ্যে কমেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যাগ্রাফিক্স - আকাশ নেয়ে
Published on

গত বছর রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৭৭৫ জন। ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশনের তথ্য অনুসারে এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে ৬ লক্ষ ৯৮ হাজার ২৮ জন। অর্থাৎ এক বছরে রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৪ লক্ষের বেশি। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীদের অনুপাতে ছাত্র সংখ্যা অনেকটাই কম। এবারের মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রসংখ্যা ২ লক্ষ ৯০ হাজার ১৭২ জন এবং ছাত্রীসংখ্যা ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার।

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক। পর্ষদের তথ্য অনুসারে নাম নথিভুক্ত করলেও শেষ পর্যন্ত মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে না ২ লক্ষ পরীক্ষার্থী। পর্ষদের দাবি, অতিমারির প্রভাবেই এমনটা হয়েছে। অন্যসূত্রের খবর ড্রপ আউটের কারণেই বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী কমেছে।

পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, অতিমারির প্রভাবেই এরকম হয়েছে। অনেকেই প্রস্তুতি নেই বলে স্বেচ্ছায় পরীক্ষা দিচ্ছে না। অনেকে টেস্টে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। কোভিডের কারণেই বেশকিছু স্কুলছুট হয়েছে। তাই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম হবার সম্ভাবনা।

পর্ষদ সভাপতির এই দাবির পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই। অনেকেরই বক্তব্য, তাহলে কি অতিমারির সময় অনলাইন পড়াশুনা ঠিকমত হয়নি?

এই প্রসঙ্গে অল বেঙ্গল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এবিটিএ) সভাপতি সুকুমার পাইন পিপলস রিপোর্টারের প্রতিনিধিকে জানান, ‘রাজ্যের বহু স্কুলে শিক্ষকের অভাব। যেখানে ছাত্র শিক্ষকের অনুপাত ১:৩০ হবার কথা অনেকজায়গাতেই তা নেই। শহর কলকাতার বুকে এরকম স্কুল আছে যেখানে ছাত্রসংখ্যা ২৮০ আর শিক্ষকের সংখ্যা ৫৪। আবার জঙ্গলমহলের দিকে ছাত্রসংখ্যার অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা কম। অনেকেই উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বদলি নিয়ে নিয়েছেন।’

পাইন আরও বলেন, ‘বিগত সময়ে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে স্কুলছুট হয়েছে। দারিদ্র্যের কারণে অনেকেই লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বাইরে চলে গেছে। এছাড়াও সরকারি স্কুলগুলোতে পরিকাঠামোর অভাব। যারফলে সাধারণ মানুষ বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছেন। রাজ্যে প্রায় ২ লক্ষ শিক্ষকের শূণ্যপদ থাকলেও তা পূরণ করা হচ্ছে না।’

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই সংসদে স্কুলছুট সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষাদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার সংসদে জানিয়েছেন, দেশের পাঁচ রাজ্যে প্রাথমিকে স্কুলছুটের সংখ্যা বেশি। এই পাঁচ রাজ্য হল উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ। এই পাঁচ রাজ্যে প্রাথমিকে মোট স্কুলছুটের সংখ্যা ৯ লক্ষ ৩০ হাজার ৫৩১। যার মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ৫ লক্ষ ২ হাজার ৭৭১ এবং ছাত্রী সংখ্যা ৪ লক্ষ ২৭ হাজার ৭২৮।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পেশ করা পরিসংখ্যান অনুসারে, দশম শ্রেণিতে স্কুলছুট পড়ুয়ার সংখ্যা ৩ লক্ষ ২২ হাজার ৪১৮। যাতে ছাত্র সংখ্যা ১ লক্ষ ৯৪ হাজার এবং ছাত্রী সংখ্যা ১ লক্ষ ২৮ হাজার। এই ক্ষেত্রে প্রথম পাঁচ রাজ্যের মধ্যে আছে মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, গুজরাট এবং আসাম।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রোজেক্ট অ্যাপ্রুভাল বোর্ডের (পিএবি) এক পরিসংখ্যান জানিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দশম শ্রেণীতে স্কুল ছুটের হার ১৫ শতাংশের বেশি। যা জাতীয় গড়ের (১৪.৬%) চেয়ে বেশি। মূলত ১০ জেলাতেই ড্রপ আউট বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

রাজ্যে কমেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা
আদানি গোষ্ঠীর স্পনসর করা পুরস্কার প্রত্যাখ্যান দলিত মহিলা কবির

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in