আনিস খানের মতোই ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলরকেও পুলিশই খুন করেছে। কাউন্সিলর তপন কান্দুর খুনের ঘটনায় এমনই অভিযোগ উঠল। নিহত কাউন্সিলরের স্ত্রী পূর্ণিমাদেবী তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ঝালদা থানার আইসির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনলেন। এই মর্মে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে তিনি চিঠিও দিয়েছেন।
চিঠিতে ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষ ছাড়াও পাঁচজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন পূর্ণিমা দেবী। তাঁরা হলেন - নিহতের ভাইপো তথা তৃণমূল নেতা দীপক কান্দু, তাঁর বাবা নরেন কান্দু, এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত বিশ্বনাথ কান্দু, শ্যামাপদ সাউ ও ভীম তিওয়ারি।
পূর্ণিমাদেবীর অভিযোগ, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ঝালদা থানার আইসি তাঁর ও তাঁর স্বামীর উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন, যাতে তাঁরা তৃণমূলে যোগ দেব এবং তাঁর স্বামী তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু তাঁরা তা করেননি। ঝালদায় তৃণমূলের পুরবোর্ড গঠনের জন্য যোগসাজশ করে এই খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। উল্লেখ্য, নির্বাচনের ফলাফলে ঝালদা পৌরসভা ত্রিশঙ্কু হয়।
এদিকে, বারবার এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে পুলিশের যুক্ত থাকা বা পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা রাজ্যেই। রাজ্যজুড়ে পুলিশের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে খুনের ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় পর একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, নিহতের ভাইপো দীপক কান্দু। তিনি ওই ওয়ার্ডেরই তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন। তদন্তে ছয় সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।
মঙ্গলবার কংগ্রেসের ডাকা পুরুলিয়া বনধ সর্বাত্মক আকার নেয়। খুনের ঘটনার প্রতিবাদে জেলা বামফ্রন্টের তরফে এই বনধকে নৈতিক সমর্থন জানানো হয়। মঙ্গলবার সকালে কংগ্রেস, সিপিআইএম, ফরওয়ার্ড ব্লক- সহ অন্যান্য দলের সমর্থকরা মিছিল করে পুলিশের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানায়। পুরুলিয়া শহরবাসীও ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছেন।
এদিন লোকসভা অধিবেশনেও অধীর চৌধুরী ঝালদার ঘটনা তুলে আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের দাবি জানান।
রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, পুলিশের সাহায্যে খুন হয়, পুলিশের সাহায্যে ভোটলুট হয়, পুলিশ দিনকে রাত, রাতকে দিন করতে পারে। এরকম অজস্র দৃষ্টান্ত প্রতিদিন মানুষ প্রত্যক্ষ করছেন। রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা নেই।
অভিযুক্ত আইসি অবশ্য এখনো পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি। পুলিশ সুপার বলেন, এক প্রত্যক্ষদর্শীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে আগেই মামলা হয়েছে। পূর্ণিমাদেবীর অভিযোগ জুড়ে নেওয়া হবে। দীপককে ধরা হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন