রাত পেরোলেই রবিবার শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। কিন্তু, সেই মেলার কেন্দ্রস্থল কপিল মুনির মন্দির এখন অস্তিত্বের সঙ্কটে। কারণ মন্দির থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে চলে এসেছে সমুদ্র। প্রতিদিনই ভাঙছে সাগরের পাড়। তবে, শনিবার এক অফিসার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কাজ করছে।
জানা যাচ্ছে, রবিবার থেকে আগামী নয় দিন চলবে এই মেলা। লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী আসবেন। তাঁদের জন্য ইতিমধ্যেই 'অস্থায়ী ক্যাম্প' করেছে প্রশাসন। এই মেলা শেষ হলে সাগরের ভাঙন রোধের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
এক আধিকারিক বলেন, জোয়ারের সময় মোহনায় জলের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই জলের ধাক্কায় সাগর পাড়ে ধস নামছে। যে কারণে, ২০২১ সালে মে মাসে ঘূর্ণিঝড় 'যশ' আছড়ে পড়ার পর মন্দির চত্বরে সমুদ্রের জল ঢুকে পড়েছিল।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তিনি বলেন, 'কপিল মুনির আশ্রমের কাছের সৈকতটি ভাঙনের কারণে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। এটি মন্দির থেকে প্রায় ৪৫০ মিটার দূরে। মন্দিরের কাছে তিনটি রাস্তাও অসুরক্ষিত। তবে চিন্তা করার দরকার নেই। মকর সংক্রান্তির কথা ভেবে আমরা একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি এবং এটিকে পুনরুদ্ধার করেছি।'
অতীতে ভাঙন বা ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে কপিল মুনির মন্দির অন্তত চারবার নষ্ট হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। নতুন করে তৈরি করতে হয়েছে মন্দির। এখনকার মন্দিরটি ১৯৭০ সালে তৈরি। কপিল মুনি মন্দিরের মোহন্ত সঞ্জয় দাস বলেন, 'ভাঙন ঠেকানোর জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে রাজ্য সরকার।' একইসঙ্গে তিনি জানান, 'ধীরে ধীরে আশ্রমের কাছে জল আসছে। কেন্দ্রের সহযোগিতাও প্রয়োজন।'
জানা যাচ্ছে, ২০০০ সালেও সমুদ্র থেকে প্রায় ৫-৬ কিমি দূরে ছিল মন্দির। আর এখন সমুদ্রের তীর ভাঙভে ভাঙতে ভীষণ কাছে চলে এসেছে। ঘূর্ণিঝড় যশ-এর পর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। সমুদ্র সৈকতে বসানো বৈদ্যুতিক আলোর অনেকগুলি উঁচু পোস্ট জলের তলায় চলে গিয়েছে। কপিল মুনির মন্দিরের সামনে থেকে একেবারে সোজা গিয়েছে ২ নম্বর রাস্তা। সেটি যেখানে সমুদ্রের ধার ছুঁয়েছে সেখানকার সৈকতের অবস্থা সবথেকে খারাপ।
মেলা প্রাঙ্গন ছাড়াও দ্বীপের বঙ্কিমনগর, সুমতিনগর ও শিবপুর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং তা আটকানোর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সরকারি আধিকারিক বলেন, 'শালবল্লা ও রাশি রাশি জিও স্ট্যাগ বস্তা দিয়ে দিনরাত ভাঙন মোকাবিলার জন্য কাজ করছে সেচদপ্তর। বস্তা ব্যবহার করে সিঁড়ি তৈরি করা হচ্ছে। ওই জায়গায় প্রায় ৪৭৫ মিটার এলাকা জুড়ে দিনরাত কাজ চলছে। মেলার সময় তীর্থযাত্রীরা যাতে ঠিকভাবে স্নান করতে পারেন তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।'
তবে সাগরদ্বীপকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বড় ধরনের কাজ করা জরুরি বলে মনে করছে প্রশাসন। কারণ, ভাঙনের ফলে, দ্বীপের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই জলের তলায় চলে গিয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন