রাত পোহালেই সারা দেশের সঙ্গে রাজ্যের ৪২ আসনের ভোট গণনা। রাজ্য জুড়ে মোট ৫৫ টি গণনা কেন্দ্রে প্রদত্ত ভোটের গণনা করা হবে। এই ৫৫ টি গণনা কেন্দ্রের জন্য ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে কমিশন। গণনা কেন্দ্রের একদম প্রথম ভাগে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এই এলাকায় নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোনো রাজ্য পুলিশ কর্মী ঢুকতে পারবেন না। পরের দুই ধাপে থাকবে রাজ্য পুলিশ। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে এক এক্স বার্তায় (পূর্বতন ট্যুইটার) প্রশ্ন তোলার পাশপাশি তিনি কমিশনকেও জানিয়েছেন।
নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকেই গণনা কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।এই বিষয়ে কমিশন যথেষ্টই কড়া। সব মিলিয়ে রাজ্যের ৫৫ টি গণনা কেন্দ্রের সুরক্ষায় থাকছে ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।
এবারের নির্বাচনে প্রথম থেকেই রাজ্যের জন্য নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলো নির্বাচন কমিশন। সাত দফার নির্বাচনের প্রতি দফাতেই রেকর্ড সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানো হয়েছে। এমনকি সপ্তম দফায় সবমিলিয়ে ১০২০ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিলো গত শনিবার। ফলে গত প্রায় ২৫/৩০ বছরের মধ্যে এই প্রথম এমন ভোট দেখলো রাজ্যবাসী যখন ভোটের দিন একটাও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
গণনার দিনও যাতে শান্তিপূর্ণভাবে গণনা শেষ হয় তার জন্য দফায় দফায় বৈঠক সেরেছে নির্বাচন কমিশন। তারপর গণনা কেন্দ্রের যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে তাতে সবচেয়ে বেশি ১৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে কলকাতা পুলিশ কমিশনারেট এলাকায়।
রায়গঞ্জ পুলিশ জেলা, ইসলামপুর পুলিশ জেলা, দার্জিলিং জেলা, কালিম্পং জেলা ও শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় ১ কোম্পানি করে বাহিনী থাকবে। পাশাপাশি জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, জঙ্গিপুর পুলিশ জেলা, আসানসোল পুলিশ কমিশনারেট, কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলা, রানাঘাট পুলিশ জেলা, বারাসত পুলিশ জেলা, বসিরহাট পুলিশ জেলা, বনগাঁ পুলিশ জেলা, হুগলি গ্রামীণ, হাওড়া, হাওড়া গ্রামীণ এলাকা, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বারুইপুর পুলিশ জেলা ও সুন্দরবন পুলিশ জেলায় ২ কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া মালদহ, বীরভূম, পুর্ব বর্ধমান, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকা, চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট এলাকা, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুর্ব মেদিনীপুর জেলার গণনা কেন্দ্রে থাকছে ৪ কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে মুর্শিদাবাদ জেলায় ও ৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার জন্য। গণনা কেন্দ্রের একেবারে কোর এরিয়ার জন্য এই বিশাল সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার মাধ্যমে কমিশন চাইছে যাতে গণনা কেন্দ্রের ভিতরে কোনরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়।
অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রথম থেকেই নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। এবার ভোট পরবর্তী হিংসা রুখতে ১৯ জুন পর্যন্ত রাজ্যে ৪০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। সবচেয়ে বেশি ৬০ কোম্পানি বাহিনী থাকছে শুধুমাত্র কলকাতা পুলিশ কমিশনারেট এলাকায়।
ভোট ঘোষণা হওয়ার পর রাজ্যে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসে সেই বাহিনী ভোট মিটে যাওয়ার পর ফিরে যাওয়াই রেওয়াজ। ভোটের ফল বের হয়ে যাওয়ার পর অল্প কিছু বাহিনী ভোট পরবর্তী হিংসা রোখার জন্য রেখে দেওয়া হয়। তবে তাও মোতায়েন করা হয় নির্দিষ্ট কিছু এলাকাভিত্তিক জায়গায়। এবার রাজ্যের প্রতিটা জেলা, পুলিশ জেলা ও কমিশনারেট এলাকাতেই আলাদা করে বাহিনী রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
কমিশন সূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে ৪ তারিখ ভোটের ফল ঘোষণার পর ৬ তারিখ পর্যন্ত বাহিনী রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। তবে রাজ্যের অতীত অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে ও কেন্দ্রে পরবর্তী সরকার গঠন হওয়া পর্যন্ত সময় ধরে নিয়ে এই বাহিনী আগামি ১৯ জুন পর্যন্ত রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।
এই ৪০০ কোম্পানি বাহিনী কোথায় কত থাকছে ! জলপাইগুড়ি জেলায় ৬ কোম্পানি, আলিপুরদুয়ার জেলা ৫ কোম্পানি, কোচবিহার জেলা ১৩, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ৭, রায়গঞ্জ পুলিশ জেলা ৬, ইসলামপুর পুলিশ জেলা ৬, দার্জিলিং জেলা ৬, শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় ৫ কোম্পানি, কালিম্পং জেলা ৪, জঙ্গিপুর পুলিশ জেলা ৫, মালদহ জেলা ১২, আসানসোল পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় ১১, বীরভূম জেলা ১৮, কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলা ১০, মুর্শিদাবাদ জেলা ১৬, পূর্ব বর্ধমান জেলা ১৮, রানাঘাট পুলিশ জেলা ৭, বারাসত পুলিশ জেলা ৭, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট ১৫, বসিরহাট পুলিশ জেলা ১২, বনগাঁ পুলিশ জেলা ১০, চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট ১০, হুগলী গ্রামীণ ১২, হাওড়া জেলা ১১, হাওড়া গ্রামীণ ৮, পশ্চিম মেদিনীপুর ১৫, বাঁকুড়া ১০, ঝাড়গ্রাম ১৩, পুর্ব মেদিনীপুর ২০, পুরুলিয়া ১০, বারুইপুর পুলিশ জেলা ১০, বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট ৭, ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলা ৮ ও সুন্দরবন পুলিশ জেলায় ৭ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন থাকছে আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন