১৫ ফুট উঁচু থেকে ঝাঁপ দিয়ে ১০ জনের প্রাণ বাঁচানো! না গল্প নয়, এটাই সত্যি। দশমীর রাতে জলপাইগুড়ির মাল নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় আচমকাই আসে হড়পা বান। মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যায় একের পর এক শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে দেখে নিজের প্রাণের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে অন্যদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন তেশিমলা গ্রামের যুবক মহম্মদ মানিক।
প্রতি বছরের মত এইবছরও দশমীর দিন বিসর্জন দেখতে মাল নদী সংলগ্ন ঘাটে উপস্থিত হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। মালবাজারের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন চা বাগান এলাকার পুজো উদ্যোক্তারা মাল নদীতেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসেন। অন্যান্যদের মত নদীঘাটে উপস্থিত থেকে তা উপভোগ করছিলেন মানিক।
স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার সময় আচমকাই আসে হড়পা বান। যার ফলে ক্রমশ বাড়তে থাকে জলস্তর। স্রোতের গতিবেগ এতটাই প্রবল ছিল যে, মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যান অনেকেই। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের, নিখোঁজ বহু। তবে, চোখের সামনে সেই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে থেমে থাকতে পারেননি মানিক। নিজের জীবন বাজি রেখে উদ্ধার কার্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি।
তেশিমলা গ্রামের এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, আমি কিছু বুঝতে পারার আগেই দেখি মানিক তাঁর মোবাইল, ঘড়ি আমার হাতে দিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিল। আমি সাঁতার জানি না বলে নদীর পাড়েই দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। কাতারে কাতারে মানুষ ভেসে যাচ্ছিল নদীর স্রোতের সাথে। সেই সময় নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় মানুষদের নদী থেকে টেনে তুলেছে মানিক। ও এখন আমাদের গ্রামের হিরো।
পুরো ঘটনাটি ইতিমধ্যে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিজের জীবন বাজি রেখে মানবিকতার পরিচয় দেওয়ায় মানিকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটিজেনদের একাংশ। তবে, একেবারেই খুশি নন তেশিমলার 'হিরো'। তাঁর কথায়, চোখের সামনে মানুষগুলোকে ভেসে যেতে দেখলাম! যাদের পেরেছি পাড়ে তুলেছি। যাদের পারিনি তাঁদের হারানোর যন্ত্রণা কিছুতেই ভুলতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, বন্ধুর সাথে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি আচমকাই নদীর জল বেড়ে গেছে। স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল একাধিক মানুষ। বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছিল। আমি সাঁতার জানি। তাই সেইসময় কোনও কিছু না ভেবে, মানুষগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। উদ্ধারকাজের সময় নিজেও আহত হয়েছি, তবুও এতগুলো মানুষ বেঁচে গেছে এটাই অনেক।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন