মমতা ব্যানার্জী চোর, জোচ্চোর, খারাপ লোকদের কথা শুনে চলেন এবং তাঁদেরকেই দলের সম্পদ বলেন তিনি। তৃণমূল সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এমনই বিষ্ফোরক অভিযোগ করলেন তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রীকান্ত মাহাতো।
তৃণমূল সূত্রের খবর, গত শুক্রবার শালবনীর তৃণমূল বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো তাঁর অনুগামী কর্মীদের নিয়ে নিজের বাড়ির সামনে এক সভা চলাকালীন এমন মন্তব্য করেন। তাঁর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী শ্রীকান্ত বাবু বলেছেন, "অভিষেক ব্যানার্জী থেকে মমতাদি পর্যন্ত সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তাঁরা বুঝতে চাননি, খারাপ লোককে তাঁরা ভালো লোক বলছেন, খারাপ লোকের কথা শুনছেন। তাহলে আমরা বাঁচব কী করে! দেবাদিদেব মহাদেব, মুনমুন, জুন মালিয়া, নুসরৎ, মিমিঝিমি, সন্ধ্যা রায়, সায়নী, সায়ন্তিকা, নেপাল সিংহ, সন্দীপ সিংহ, উত্তরা সিংহ যারা দলকে লুটেপুটে খাচ্ছে তাঁরা যদি সম্পদ হয়, তাহলে তো আর পার্টি করা যাবে না।"
তিনি আরও বলেন, "লোকে তো বলছে মন্ত্রীরা সবাই চোর। চোর-ডাকাতদের কথা শুনবে পার্টি, আর আমরা চুপ থাকবো? তাহলে আমাদের পথ দেখতে হবে। কী? তাই তো? না হলে লোকে দোষারোপ করে বলবে ওই মন্ত্রীরা সকলে চোর, তাই বলছেও তো। দল চোরদের কথা শুনবে। দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতার লোক ডাকাতি করবে। আর আমরা চুপ থাকব? এই মন্ত্রীসভায় থাকা উচিত হবে? হয় আপনাকে পথ দেখে আশ্রমে চলে যেতে হবে। নাহলে আপনাকে সামাজিক আন্দোলন করতে হবে।"
সেদিনের সভায় উপস্থিত শ্রীকান্তর সমর্থকরা তাঁর বক্তব্যে সায় দিলেও যথেষ্ট অস্বস্তিতে ভুগছে ঘাসফুল শিবির। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে এই বিষ্ফোরক মন্তব্যগুলি শোনার পর দলের পক্ষ থেকে মাহাতোকে শোকজ করা হয়েছে এবং মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তাঁকে শোকজ করেছেন তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর তথা বিধায়ক অজিত মাইতি।
তবে তাতেও কি স্বস্তি মিলেছে তৃণমূলের অন্দরে? তৃণমূল সূত্রের খবর, শুক্রবার শালবনীর দক্ষিণশোল মৌজায় শ্রীকান্ত এবং তাঁর সহকর্মীদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগে বিক্ষোভ ও পথ অবরোধ হয়েছিল। এরপরই নিজের বাড়ির সামনে ছোট সভা ডেকে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূল বিধায়ক।
তৃণমূলের তরফে শ্রীকান্তর মন্তব্য নিয়ে দু'রকমের ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। প্রথমত, এটা কোনও ব্যতিক্রমী বিষয় নয়। জনরোষের হাত থেকে বাঁচতে দলের অনেকেই এভাবেই নিজের পিঠ বাঁচাতে চাইছেন। দ্বিতীয়ত, মন্ত্রী হয়ে নিজের আখের গোছাতে না পারায় কোণঠাসা হয়ে ক্ষোভ দেখাচ্ছেন মাহাতো।
তবে এই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী শিবির। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, "শ্রীকান্ত মাহাতো যা বলছেন তা রাজ্যের সাধারণ মানুষ ও তৃণমূলের কর্মীরাও বলছেন। এই পাচারকারী, লুটেরাদের বাহিনীতে ভরে গিয়েছে তৃণমূল। এদিকে দলের মন্ত্রী যখন নিজেই দলের ভিতরের নেতা-নেত্রীদের নাম করে 'চোর' বলছেন, তখন তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায় আবারও জুতোপেটা করার হুমকি দিয়েছেন বিরোধীদের উদ্দেশ্যে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন