দক্ষিণবঙ্গে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের জেরে সরকারি, সরকার অনুমোদিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে গ্রীষ্মের ছুটি আরও ১১ দিন বাড়ালো রাজ্য সরকার। রবিবার এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সাথে আলোচনা করেছেন।
সেই আলোচনার ভিত্তিতেই শিক্ষা দপ্তরের তরফে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেই জানা গেছে। ২৬ জুন পর্যন্ত গরমের ছুটি বাড়ানো হল। উল্লেখ্য, এর আগে অতিরিক্ত গরমের কারণে রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুলগুলির ছুটি ১৫ মে থেকে এগিয়ে এনে ২ মে থেকে দেওয়া হয়েছিল। টানা ৪৫ দিন।
কোভিড অতিমারীতে প্রায় টানা ২ বছর স্কুলগুলি বন্ধ থাকার কারণে পঠন-পাঠনে যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে। অনলাইন-অফলাইন পঠন-পাঠনের জেরে বহুবার বিতর্কের মুখে পড়েছে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা। এরপর এ বছর গ্রীষ্মাবকাশ এগিয়ে আনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল বিভিন্ন মহলে। ছুটি কমানোর দাবি উঠেছিল। এবার ফের ছুটি বাড়ানোর প্রসঙ্গে শিক্ষা শিবির থেকে বিভিন্ন মহলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সাথে পঠন-পাঠন স্বাভাবিক রাখার জন্য মর্নিং স্কুল করানোর দাবি তোলা হয়েছে।
শিক্ষাদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রবিবার উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার পানিহাটিতে দণ্ড মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের জেরে এবং মেলায় অতিরিক্ত ভীড় হওয়ার জন্য সেখানে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মৃত্যু হয় তিনজনের। এছাড়াও বেশকিছুজন সেখানে 'হিট স্ট্রোকে' আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন।
এর পাশাপাশি দিন পাঁচেক আগে আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ডে মুখ্যমন্ত্রীর একটি সভা ছিল। সেই সভায় বাবা-মায়ের সাথে এসেছিল এগারো বছরের মেয়ে মুস্কান। প্রচণ্ড গরমে ঘটনাস্থলেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে। ঘটনাটি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসামাত্রই তিনি নিজের হাতে মেয়েটির পরিচর্যা করতে শুরু করেন। নিজের হাতে মুখ মুছিয়ে মেয়েটিকে জল খাইয়ে দেন। এরপর মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই ঘটনাগুলির পরই মুখ্যমন্ত্রী চিন্তিত হয়ে পড়েন। দাবদাহ আরও বাড়লে বাচ্চারা কীভাবে স্কুলে যাবে এবং টানা ৫ ঘণ্টা স্কুল করবে তা ভাবিয়ে তুলেছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
অন্যদিকে, এপ্রিলের শেষে দক্ষিণবঙ্গে অতিরিক্ত গরমের কারণে গ্রীষ্মাবকাশ এগিয়ে আনার পাশাপাশি তা দীর্ঘায়িত করা হয়েছিল। বেশকিছু শিক্ষক সংগঠন তার বিরোধিতা করেছিল। তাঁদের দাবি ছিল, কোভিডের কারণে যেহেতু দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। তাই অনলাইনে পড়াশোনার সুযোগ সবাই পায়নি। এই অবস্থায় টানা ৪৫ দিন ছুটি দেওয়া হলে আরও ক্ষতি হবে পড়াশোনার।
সূত্রের খবর, গরমের ছুটি আরও বাড়ানোর প্রশ্নে বেশিরভাগ শিক্ষক সংগঠন জানাচ্ছে আরও ছুটি বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইনের বক্তব্য, "গরমের ছুটি বাড়লে পড়ুয়ারা ফের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ওদের প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন হয়নি এখনও। প্রয়োজনে মর্নিং স্কুল হোক।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন