ভোটমুখী বাংলায় এবার ভূপতিনগরে তদন্ত করতে গিয়ে আক্রান্ত এনআইএ। শনিবার ভোরে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে বাজি বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্তে আসে এনআইএ। অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে আটক করে গাড়িতে তোলার সময় এলাকার মহিলারা ছুটে এসে বাধা দেয়। তাঁদের উপর এবং তাঁদের গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ এনআইএ'র। সূত্রের খবর, যে দু’জনকে আটক করেছিল এনআইএ, সেই বলাই মাইতি এবং মনোব্রত জানাকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। এরা দুজনেই তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত।
এনআইএ আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনায় কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ তুলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এমন ঘটেছে। সুকান্ত বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি ঘটেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। স্থানীয় মানুষ নন, এঁরা চিহ্নিত তৃণমূল নেতা এবং কর্মী। যে ভাবে একের পর এক কেন্দ্রীয় এজেন্সির উপর আক্রমণ হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গকে দেখে মাঝেমাঝে আমাদের মনে হচ্ছে আফগানিস্তানে পরিণত হয়ে গিয়েছে।“ এরপরেই তিনি রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিচারব্যবস্থার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় এনআইএ –র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার বালুরঘাটের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘ওখানে মহিলারা হামলা করেননি। আসলে হামলা করেছে এনআইএ। মধ্যরাতে গিয়ে যদি মহিলার বাড়িতে গিয়ে অত্যাচার করে, তবে মহিলারা কি হাতে শাঁখা, বালা পরে বসে থাকবে? মাথায় ওড়না দিয়ে বসে থাকবে? তারা নিজেদের ইজ্জত বাঁচাবে না? মধ্যরাতে গ্রামে অচেনা কাউকে দেখলে গ্রামবাসীরা যে আচরণ করেন, এনআইএর লোকজনকে দেখেও গ্রামবাসীরা তা-ই করেছেন।"
তিনি আরও বলেন, ‘‘কবে ২০২২ সালে মেদিনীপুরে একটা চকোলেট বোমা ফেটেছে, তার তদন্ত করতে এই ভোটের মুখে মাঝরাতে ছুটে আসতে হল এনআইএকে?’’
এরপরেই কেন্দ্র সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি মন্তব্য করেন, “বিজেপি কী ভেবেছে, ওরা সব বুথ এজেন্টদের গ্রেফতার করে নেবে? এনআইএর কী অধিকার আছে? ওরা বিজেপিকে সমর্থন জোগাতেই এমনটা করছে। আমরা গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে বিজেপির এই নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার আবেদন করছি।’’
যদিও এনআইএ সূত্রে খবর, অভিযানে যাওয়ার আগে স্থানীয় পুলিশের সাহায্য চেয়েছিল তারা। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, বাহিনী দেওয়ার আগেই অভিযানে নেমে পড়ে এনআইএ। যদিও এনআইএর সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা ছিল।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে অভিষেক ব্যানার্জির সভার আগের দিন রাতে কাঁথির ভগবানপুর ২ ব্লকের ভূপতি নগরের নাড়ুয়া বিলা গ্রামে বিস্ফোরণটি হয়। বিস্ফোরণে নিহত হন ৩ জন। তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্না, তাঁর ভাই দেবকুমার মান্না এবং বিশ্বজিৎ গায়েন। বাকি দু'জনও তৃণমূল কর্মী। ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরে তিনজনের ঝলসানো দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
একাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে অনুযায়ী এলাকার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তদন্তের জন্য নোটিশ পাঠানো হলেও তাঁরা আদালতে হাজির না হওয়ায় শনিবার ভোরে ভুপতিনগরে আসে এনআইএ প্রতিনিধিরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন