তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খানের বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় অকালে প্রাণ হারালো ছয় বছরের এক শিশু। বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের পিপড়াখালি এলাকায়। এই ঘটনায় আবু তাহেরকেই দায়ী করেছেন শিশুটির বাবা-মা। ইতিমধ্যেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে গোটা মুর্শিদাবাদ জেলায়।
সূত্রের খবর, ছয় বছরের একরত্তির নাম হাসিম সরকার। বাড়ি নওদার গঙ্গাধারী গ্রামে। মায়ের সাথে পিপড়াখালির একটি ব্যাঙ্কে এসেছিল সে। সেখানকার রাস্তা দিয়ে যথেষ্ট গতিবেগে ছুটে আসছিল সাংসদের গাড়ি। সজোরে এসে ধাক্কা মারে শিশুটিকে। সাথে সাথে বিপুল রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায় মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রায় ঘণ্টাতিনেক চিকিৎসার পর শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
ছোট্ট হাসিম প্রান্তিক কৃষক পরিবারের ছেলে। চাষবাসের পাশাপাশি বাবা-মা দু'জনেই দিনমজুরের কাজ করেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার। হাসপাতালেই বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসিমের বাবা-মা। তাঁদের স্পষ্ট অভিযোগ, এমপি বলে আমার ব্যাটাকে মেরে ফেলল। ছেলেকে খেয়ে না খেয়ে বড় করছিলাম। কত কষ্ট করে মানুষ করছিলাম। এমপি হয়েছে বলে এরকমভাবে গাড়ি চালাবে! গোটা ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ।
অন্যদিকে, নিহত শিশুর পরিবারের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে বরং তাঁর মায়ের দিকেই আঙুল তুলেছেন খোদ তৃণমূল সাংসদ। যার ফলে আরও বেশি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন সদ্য সন্তান হারা মা।
আবু তাহেরের কথায়, ওই শিশু আমার গাড়ির সামনে ছুটে আসে। তাঁর মা ব্যাঙ্কের কাজে এসেছিল। দুর্ঘটনার পর যখন ৫০-৬০ জন এসেছে, তখনও মায়ের দেখা মেলেনি। অনেক পরে সে খোঁজ-খবর করেছে। আমি কোলে করে বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে আসি। আমি মর্মাহত।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, হাসিমের মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ্যে আসতেই পারিষদদের নিয়ে সেখান থেকে চলে যান তৃণমূল সাংসদ। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি শিশু মৃত্যুর কথা প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে গাড়িতে ওঠার সময় জানান যে, শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় রাজ্যের শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিরোধীরা। শিশুর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন - তৃণমূলের নেতা, বিধায়ক, সাংসদদের সাদা-কালো স্করপিও গাড়ির দাপটে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। বেপরোয়া গতিতেই তাঁদের গাড়ি চলে। শুধু চালককে গ্রেপ্তার করে ঘোটা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। চালক বেপরোয়া গাড়ি চালালে তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব গাড়ির মালিকের। সেই মালিকের এমন অসংবেদনশীল মন্তব্যের দায় শাসক দলকেই নিতে হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন