বেসরকারি আবাসিক স্কুলে মেধাবী ছাত্রের দেহ উদ্ধার; গ্রেফতার স্কুল মালিক, খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের

People's Reporter: ক্ষীরপাই পুলিশ ফাঁড়িতে মৃত ছাত্রর দেহ ঘিরে রেখে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসী ও পরিবারের লোকজনরা।
ছবি - প্রতীকী
ছবি - প্রতীকী
Published on

বেসরকারি আবাসিক বিদ্যালয়ের এক মেধাবী ছাত্রের মৃত দেহ উদ্ধার ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনায়। নিহত ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে ওই ছাত্রকে।

ক্ষীরপাই পুলিশ ফাঁড়িতে মৃত ছাত্রর দেহ ঘিরে রেখে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসী ও পরিবারের লোকজনেরা। শেষ পর্যন্ত স্কুলের মালিক ও তাঁর স্ত্রী তথা স্কুলের অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয়েছে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে। এই ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং স্কুলের মালিকের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবার।

মঙ্গলবার সকালে চন্দ্রকোনা থানার রামজীবনপুর পৌরসভার বাইপাস সংলগ্ন বেসরকারি আবাসিক স্কুল - ট্রিজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে কিছু দূরে একটি পুকুর থেকে নবম শ্রেণির ফার্স্ট বয় শুভজিত দত্তের দেহ উদ্ধার করা হয়।

স্কুলের মালিক গৌতম দাস সাংবাদিকদের সামনে এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “এমন ঘটনা কী করে ঘটল আমি কিছুই জানি না। নিরাপত্তাকর্মীরা আমাদের এসে খবর দেন পুকুর থেকে শুভজিতের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।“

যদিও শুভজিতের পরিবারের তরফ থেকে স্কুলের মালিকের দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ, প্রকৃত ঘটনা চাপা দিয়ে পুকুরের জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হচ্ছে। ক্যাম্পাসে কোনও পুকুর নেই। স্কুল ক্যাম্পাসের গেট থেকে বাইরে আটশো মিটার দূরে ফাঁকা মাঠে একটি পুকুর রয়েছে। প্রাচীর ঘেরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে শুভজিত একা একা পুকুরে কখন গেল তা গেটের নিরাপত্তা কর্মীরাও বলতে পারছে না। এখানেই তাঁদের সন্দেহ হচ্ছে। কেন সিসি ক্যামেরার নজরদারি নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিবার।

পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গৌতম দাস ও তাঁর স্ত্রী ধীরা পাল দাসের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় (খুন) মামলা রুজু হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার তাঁদের গ্রেফতার করে ঘাটাল মহকুমা আদালতে তোলা হয়।

চন্দ্রকোনা থানার রানিগঞ্জ চৌকার গ্রামের বাসিন্দা শুভজিতের বাবা শান্তিনাথ দত্ত বলেন, “প্রতিমাসে আট হাজার টাকা কর্তৃপক্ষকে ফিজ দিতে হয়। ন্যূনতম নিরাপত্তা থাকবে না এমন কম বয়সের পড়ুয়াদের নজর করার জন্য?”

পুলিশ ফাঁড়িতে মৃত ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “গ্রামের স্কুলে না পড়িয়ে ছেলে মেধাবী হওয়ায় চার বছর আগে এই স্কুলে ভর্তি করে হস্টেলে রেখেছিলাম। শান্ত, চুপচাপ থাকত ও। সব সময় পড়াশোনা নিয়ে থাকত। অনেক স্বপ্ন ছিল ওকে নিয়ে।“

১৫ বছর বয়সের ছেলেকে হারিয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন শুভজিতের মা।

মৃত ছাত্রের কাকিমা পম্পা দত্ত বলেন, “কখন ঘটনা ঘটেছে পুকুরের কাছাকাছি থাকা কোনও মানুষই বলতে পারছেন না। বেলা ১২টা ৪০মিনিট নাগাদ স্কুল থেকে ফোন করে বলা হয়, আমরা যেন দ্রুত ক্ষীরপাই হাসপাতালে তাড়াতাড়ি চলে আসি। আমাদের ছেলের অবস্থা খুব খারাপ। কিন্তু ক্ষীরপাই হাসপাতালে এসে জানতে পারি আমাদের ছেলে আর নেই এবং আমাদের আসার আগেই তাঁর দেহ এখান থেকে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।“

ছাত্রের কাকিমা আরও বলেন, "আমরা গ্রামে থাকি। শুভজিৎ খুব ভাল সাঁতার জানে। ও ছুটিতে বাড়ি এলেই পুকরে সাঁতার কাটত। স্কুল কর্তৃপক্ষ চৌবাচ্চায় ডুবিয়ে বা পিটিয়ে যেভাবে হোক ওকে খুন করেছে। কোনও গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।“

এসডিপিও (ঘাটাল) অগ্নীশ্বর চৌধুরী বলেন, ‘‘ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ময়নাতদস্তের রিপোর্ট এলে সেইমত পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।“

ছবি - প্রতীকী
TMC: গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল, শেষ ১৫ দিনে খুন ৪ শাসক নেতা!

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in