প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ছোটবেলা থেকে ডায়াবেটিসের ভুগতে থাকা মেয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন। প্রয়োজনে দিল্লির এইমসে গিয়ে তার চিকিৎসা করানো হবে। এই আশ্বাস দিয়েছিলেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু সেই আশ্বাস দেওয়ার পর কেটে গিয়েছে নয় মাস। সেই মেয়েটির এখনও দিল্লি যাওয়া হয়নি। চিকিৎসা হচ্ছে এলাকার চিকিৎসকের কাছেই। ফারাক বলতে সেই মেয়ের ওষুধ, ইনসুলিনের খরচ দিচ্ছে বিজেপি।
৯ মাস আগে ২০২০ সালের ৫ নভেম্বরে ফিরে দেখা যাক। বাঁকুড়ার চতুর্ডিহি গ্রামের দিনমজুর বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও আরও অনেকে। সেদিন বিভীষণের বাড়ির আশপাশের উৎসাহী মুখের উঁকিঝুঁকি ছিল অনেক বেশি। স্বভাবতই বাড়ি ঘিরে রেখেছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সংবাদমাধ্যম তো ছিলই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে হাতের কাছে পেয়ে ছোট থেকে ভুগতে থাকা নিজের মেয়ে রচনার শরীর খারাপের কথা জানিয়েছিলেন বিভীষণ। তিনি প্রতিশ্রুতিও পেয়েছিলেন। কিন্তু ন’মাস পর এখনও বাঁকুড়ার চিকিৎসকের ভরসাতেই বিভীষণের পরিবার। যদিও তাঁরা চান, শাহের প্রতিশ্রুতি মতো দিল্লিতে চিকিৎসা হোক।
তখন বিধানসভা নির্বাচনে বঙ্গ জয়ের আশায় তোড়জোর শুরু করেছে বিজেপি। রাজ্যে এসে প্রচারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঝড় তুলেছেন জেপি নড্ডা থেকে অমিত শাহ, বিজেপি-র সর্বভারতীয় নেতারা। সেই সঙ্গে রাজ্যের কৃষক, বাউল, শ্রমিক— বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যাহ্নভোজনের জায়গা হিসেবে এঁদেরকেই বেছে নেওয়া হয়। আদিবাসী পরিবার হিসেবে বিভীষণদের বাড়িতে যান অমিত।
নিজেরা মোটা চালের ভাত খেলেও অমিতের জন্য সরু চাল রেঁধেছিলেন মণিকা। সঙ্গে রুটি, ডাল, পটলভাজা, শুক্তো আর আলুপোস্ত, চাটনি আর অমিতের প্রিয় পাঁপড়ভাজাও ছিল। কাঁসার থালার উপর কাঁচা শালপাতায় খাবার পরিবেশন করা হয়। বিভীষণের স্ত্রী মণিকা বললেন, ‘আমার মেয়ে সেই ছোট থেকেই অসুস্থ। চিকিৎসা হচ্ছে, কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম ভালো ডাক্তার দেখাতে দিল্লি নিয়ে যাব। কিন্তু এখনও সেটা হল না।' বিভীষণ, ছেলেমেয়েকে নিয়ে ছবিও তুলেছিলেন অমিত। সেই সব ছবি টুইট করে আপ্যায়নে খুশি অমিত লিখেছিলেন, ‘চতুর্ডিহি গ্রামে শ্রী বিভীষণ হাঁসদাজির বাড়িতে চমৎকার বাঙালি খাবার খাওয়ার সুযোগ পেলাম। কোনও শব্দই তাঁদের আতিথেয়তা বর্ণনা করতে পারবে না।’
কি হয়েছে রচনার? সে ‘টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস’-এ আক্রান্ত। এখন দিনে তিনবার ইনসুলিন নিতে হয়। সেই সঙ্গে অন্যান্য ওষুধও আছে। শাহ চলে যাওয়ার পরে স্থানীয় সাংসদ সুভাষ সরকার বিভীষণের বাড়ি এসে রচনার চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে সুগারের পরিমাণ জেনে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থাও করেন। কিন্তু এইমসে নিয়ে যাওয়া হবে কবে?
শাহ তাঁর বাড়িতে আসায় অনেক বিতর্ক তৈরি হয়। অমিত শাহ চলে যাওয়ার পর বাঁকুড়া জেলা পরিষদের এক তৃণমূল সদস্যা বিভীষণদের বাড়ি গিয়ে মণিকাকে শাড়ি উপহারও দেন। পরে রচনার চিকিৎসার জন্য বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক মেডিক্যাল অফিসারকে নিয়ে বিভীষণের বাড়িতে যান স্থানীয় বিডিও। তা নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। যদিও বিভীষণের কথায়, ‘আমি আর কিছু চাই না। শুধু চাই মেয়েটার ভালো চিকিৎসা হোক।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন