ঘরে বাইরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েও নিজের অবস্থানে অনড় থাকলেন অখিল গিরি। দলের নির্দেশে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিলেও, সরকারি মহিলা আধিকারিকের কাছে ক্ষমা তিনি চাইবেন না, এদিন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন তিনি। সোমবারই হোয়াট্সঅ্যাপ মারফত মুখ্যসচিবকে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন তিনি।
শনিবার কাঁথির ফরেস্ট রেঞ্জের অফিসার মনীষা সাউয়ের সঙ্গে কথপোকথনের সময় তাঁর উদ্দেশ্যে একাধিক কুকথা বলতে শোনা যায় কারামন্ত্রী অখিল গিরিকে। এই দৃশ্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অখিল গিরিকে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেন সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। এরপর রবিবার কাঁথিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন অখিল গিরি। সেখানে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় এই মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন কিনা। এর উত্তরে তিনি বলেন, “আমি কোনও সরকারি অধিকারিকের কাছে ক্ষমা চাই না। আমার রাজনৈতিক জীবনে কোনও আধিকারিকের কাছে ক্ষমা চাইনি। আর ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।“
তিনি বলেন, “দল মনে করেছে আমার কাজে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাই আমার কাছে নির্দেশ এসেছে পদত্যাগ করার। আমি দলের অনুগত কর্মী। তাই দল যে নির্দেশ দিয়েছে, তা পালন করব। সোমবার গিয়ে হাতে চিঠিটি জমা দিয়ে আসব।“
তাঁর কথায়, “মন্ত্রিত্ব ছাড়ার ব্যাপারে আমি অনুতপ্ত নই। আমি মন্ত্রী হয়েছি ২০২১ সালে। মন্ত্রিত্ব আমার কাছে কোনও বড় কথা নয়। বড় কথা, আমার এলাকার মানুষকে নিয়ে যতটুকু লড়াই করা দরকার, আগামীদিনে আমার লড়াই চলবে। জনপ্রতিনিধি হিসাবে লড়াই করব। আমার কাছে যদি কোনও পদ না থাকে, আমার রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে লড়াই করে যাব।“
মহিলা আধিকারিকের উদ্দেশ্যে বলা ‘কুকথা’ প্রসঙ্গে অখিল বলেন, “পরিস্থিতির সময় আমি একটু উত্তেজিত হয়ে যাই। এই উত্তেজিত হওয়ার সময় যে কথাগুলো উচ্চারণ করি, পরবর্তীকালে মনে হয় বোধহয় না বললেই ভাল হত। কিন্তু কথা তো আর ফেরানো যায় না। তাই সেই হিসাবে যদি ভুল হয়, তবে আমার ভুল।“ তবে ক্ষমা তিনি চাইবেন না সে বিষয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
তাজপুর সমুদ্রসৈকতে বনদফতরের জায়গা জবরদখল রুখতে গিয়ে মন্ত্রীর হুমকির মুখে পড়েন কাঁথির ফরেস্ট রেঞ্জের অফিসার মনীষা সাউ। জায়গা জবরদখলকারী হকারদের সমর্থনে এগিয়ে এসে ওই আধিকারিককে মন্ত্রী বলেন, “আপনি কত বড় অফিসার, আমি দেখে নেব। আপনি সবাইকে নিয়ে চলুন। না হলে বেশি দিন থাকতে পারবেন না। আপনার আয়ু ৭-৮ দিন, ১০ দিন।“
বাগবিতণ্ডা চলতেই থাকে। একসময় মন্ত্রীকে মহিলা আধিকারিকের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, “বেশি কথা বলবেন না আপনি একদম। আপনি এক জন জানোয়ার, বেয়াদব রেঞ্জার। আপনি সরকারের চাকর। মাথা নিচু করে কথা বলবেন। আপনি একদম বেয়াদবি করবেন না। আপনাকে যখন সবাই ডাঙ দিয়ে পেটাবে, তখন দেখবেন!”
অখিল গিরির এই মন্তব্যে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই আধিকারিককে ফোন করেন বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন