উত্তর চব্বিশ পরগণার হিঙ্গলগঞ্জের শিবির থেকে চাদর, কম্বল ও সোয়েটার মিলিয়ে যে ১৫ হাজার শীতবস্ত্রের তালিকা তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, সেগুলি আসলে পাঠানো হয়েছিল বসিরহাট মহকুমার ৫টি ব্লকের ৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য! এমনই তথ্য উঠে এসেছে সরকারি নির্দেশিকায়।
গত মঙ্গলবার উত্তর চব্বিশ পরগণার হিঙ্গলগঞ্জে গরীব এবং দুঃস্থ মানুষজনদের শীতবস্ত্র প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে উপযুক্ত পরিমাণ শীতবস্ত্র না থাকায় প্রশাসনিক আধিকারিকদের উপর বেজায় চটে যান তিনি। সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, তবে কি নিছকই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সরকারি মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক প্রচারের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী?
সরকারি সূত্রের খবর, শীতবস্ত্র কীভাবে বিতরণ করা হবে তা চূড়ান্ত করে গত ২৬ নভেম্বর উত্তর চব্বিশ পরগণার অতিরিক্ত জেলাশাসক হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি ১, সন্দেশখালি ২ এবং মিনাখাঁর বিডিওদের কাছে একটি নির্দেশিকা পাঠায়। গরীব এবং দুঃস্থদের শীতবস্ত্র বিলির কথা সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল -
১) হিঙ্গলগঞ্জের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জন্য সরকারি বরাদ্দ ছিল ১০৬২টি চাদর, ১০৬২টি কম্বল, ১০-১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ১০৬২টি সোয়েটার।
২) একইভাবে হাসনাবাদ ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জন্য ১০৬২টি চাদর, ১০৬২টি কম্বল, ১০-১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ১০৬২টি সোয়েটার বরাদ্দ করা হয়েছিল।
৩) মিনাখাঁ, সন্দেশখালি ১ এবং ২ নম্বর ব্লকের প্রত্যেকটিতেই ৮টি করে গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখানে ৯৪৪টি চাদর, শিশুদের সোয়েটার এবং কম্বল বিতরণ করার নির্দেশ ছিল।
৪) গত ২৮ নভেম্বর জেলা প্রশাসনের গুদাম থেকে ব্লকভিত্তিক বণ্টন করা শীতবস্ত্র সংগ্রহ করার কথা ছিল।
সাধারণত সরকারি সামগ্রী বিলি করতে গেলে মাস্টার রোল তৈরী করতে হয়। উপভোক্তাদের সামগ্রী প্রদানের পর সেই মাস্টার রোলে সাক্ষর করাতে হয়। একইভাবে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত কর্মীদেরও সেখানে সাক্ষর করতে হয়। তারপর সেই মাস্টার রোল পাঠাতে হয় ব্লক প্রশাসনের কাছে। কিন্তু জানা গেছে, মঙ্গলবার হিঙ্গলগঞ্জে ১১ হাজার শীতবস্ত্র প্রদানের ক্ষেত্রে কোনওরকম মাস্টার রোল মানা হয়নি।
অন্যদিকে, বসিরহাট মহকুমার ৫টি ব্লকের জন্য ১৫ হাজার শীতবস্ত্র বিলি করা এবং সেই রিপোর্ট ১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর কোনটাই পালন করা হয়নি বলেই জানা গেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন