শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দমকলের পর এবার ফের নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তমলুক-ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় বিষ্ফোরক অভিযোগ করেছেন মামলাকারীরা।
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, তমলুক-ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠরা চাকরি পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়ের ঘনিষ্ঠের বোন। এছাড়াও চাকরি পেয়েছেন ব্যাঙ্ক অধিকর্তাদের ঘনিষ্ঠরা।
২০১৯ সালে তমলুক-ঘাটাল সমবায় ব্যাঙ্কের ৫২টি শূন্যপদে নিয়োগ করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। কিন্তু নিয়োগ হয়েছে ১৩৪ জনের। এমনকি, এসএসসি-র মত এখানেও আবেদন না করে এবং মেধাতালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও অনেকেই চাকরি পেয়েছে বলে অভিযোগ মামলাকারীদের।
আদালতের হলফনামায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, মন্ত্রী অরূপ রায়ের আপ্ত সহায়ক সত্য সামন্ত এবং তাঁর বোন মুনমুন সামন্ত পাত্র চাকরি পেয়েছেন। এছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি প্রয়াত দেবব্রত দাসের ভাইপো অমৃতসূদন দাস, সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান গোপাল মাইতির ভাইপো অমল মাইতি, সমবায় ব্যাঙ্কের অধিকর্তা প্রণয় কুমার চক্রবর্তীর ভাইপো অর্ণব চক্রবর্তী সহ আরও অনেকেই চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ।
সমবায় সমিতিতে কর্মী নিয়োগ করতে গেলে মূলত কো-অপারেটিভ সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ করতে হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, তমলুক-ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্ভিস কমিশনকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে দু'দফায় কর্মী নিয়োগের অনুমতি দিয়েছিলেন সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়। অতিরিক্ত হলফনামায় এই অভিযোগ উঠে এসেছে।
যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি অরূপ রায়ের। তাঁর বক্তব্য, "আমি আজ পর্যন্ত এরকম কারও নাম সুপারিশ করিনি। কেউ দেখাতেও পারবে না যে আমি কোনও সুপারিশ করেছি। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। তাই আমি এই বিষয়টিকে কোনও গুরুত্ব দিতে চাইনা। তবে দুর্নীতি যদি হয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই তদন্ত হবে। দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা হবে।"
এ প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য - "গত ১০-১১ বছরে পশ্চিমবাংলায় নিয়োগ কার্যত খুব কম হয়েছে। যা নিয়োগ হয়েছে, তার অন্তত ৮০ ভাগ দুর্নীতি। ছাই উড়িয়ে দেখলেই অমূল্য রতন পাওয়া যাবে। তৃণমূলের নেতার আত্মীয়, ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের আত্মীয় এগুলো সবই নাকি কাকতালীয়! কারোর না কারোর সুপারিশ তো বটেই! অরূপ বাবু বলছেন উনি সুপারিশ করেননি। তাহলে কার সুপারিশে হয়েছে বলুন? তলার-ওপরের-মাঝের নাকি একেবারে উপরের অর্থাৎ সুপ্রিমোর সুপারিশে হয়েছে? অরূপ বাবু নিজের দায়িত্ব অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে আসলে মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করে দিচ্ছেন।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন