ধর্ষিতাকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বললেন খোদ মহিলা তৃণমূল বিধায়ক! মালদার একটি গ্রামের তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন এক মহিলা। এই অপরাধে সালিশি সভায় নির্যাতিতাকে কুরুচিকর প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বৈষ্ণবনগরের তৃণমূল বিধায়ক চন্দনা সরকারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসায় ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী।
ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার কালিয়াচক-৩ নম্বর ব্লকের একটি গ্রামে। নির্যাতিতা একজন অভিবাসী শ্রমিকের স্ত্রী। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে তিনি বলেন, তৃণমূল পরিচালিত বীরনগর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পল্টু মণ্ডল। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি মহিলাটির সাথে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন এবং তাঁকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেন।
নির্যাতিতার কথায়, "পল্টু মণ্ডল আমাকে আমার দুই মেয়েকে নিয়ে আলদা বাড়িতে থাকতে বাধ্য করেছিল। তাঁর (পড়ুন পল্টু মণ্ডল) সাথে থাকাকালীন আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি। কিন্তু সে আমাকে গর্ভপাত করতে বাধ্য করেছিল। এই ঘটনার কয়েক মাস পর আমি যখন পুনরায় গর্ভবতী হই এবং তাঁকে বিয়ে করতে বলি আমায়, সে আমার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়।"
নির্যাতিতা আরও জানান, থানায় অভিযোগ দায়ের করার কিছুদিন পর তৃণমূল বিধায়ক চন্দনা সরকারের নির্দেশে একটি শালিশি সভা ডাকা হয়। সেই সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয় তাঁকে। মহিলার কথায়, "আমাকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১.৫ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দেওয়া হয় সভায়। কিন্তু আমি ওদের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি।"
এই ঘটনার জেরে গোটা মালদা জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, চন্দনা সরকার শুধু তৃণমূল বিধায়কই নন। তিনি মালদা জেলা পরিষদের উপ-প্রধান এবং জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতি। তাঁর দাবি, গ্রামাঞ্চলে "সমস্যার সমাধান খোঁজার" জন্য সালিশি সভা আহ্বান করা একটি সাধারণ অভ্যাস। শুধু তাই নয়, চার মাসের অন্তঃসত্ত্বার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপির মালদা দক্ষিণ (সাংগঠনিক) জেলার সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি। তাঁর কথায়, "এটা অবিশ্বাস্য! একজন মহিলা বিধায়ক সালিশি সভার মাধ্যমে এমন প্রস্তাব দিচ্ছেন এবং ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। যদি অবিলম্বে বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে আমরা প্রতিবাদে নামব।"
অন্যদিকে, প্রবীণ তৃণমূল নেতা তথা দলের কোর কমিটির সদস্য কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী জানান, "সালিশি সভা বেআইনি। যখন পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের পর মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে, তখন তদন্ত চালিয়ে যাওয়া উচিত...। এক্ষেত্রে কোনও বিধায়ক বা রাজনৈতিক দলের নেতা হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। এটা হতাশাজনক! আমরা আশা রাখি রাজ্য নেতৃত্ব এই বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন