আর জি কর আবহের মধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরের ৯৩ জন চিকিৎসককে শোকজ করল জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট ভাঙার অভিযোগ তুলে ওই চিকিৎসকদের শোকজ করা হয়েছে বলে খবর। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুমোদন নিয়েই করা হয়েছে। এতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে চিকিৎসক মহলে।
আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে চিকিৎসা মহল। পূর্ব মেদিনীপুরের চিকিৎসকরাও এই ঘটনার প্রতিবাদে সবর হয়েছেন। এই আবহে ৯৩ জন চিকিৎসককে শোকজ করার ঘটনা প্রতিবাদ দেখানোর কারণেই হয়েছে বলে মনে করছে চিকিৎসা মহল। একই মত ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ’র।
স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে পাঠানো ওই শোকজ নোটিশে জানতে চাওয়া হয়েছে, ডাক্তাররা কীভাবে একসাথে দু’টি বা তিনটি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন? একটা নার্সিংহোমে তাঁরা কত সময় দেন? চিকিৎসকদের পাশাপাশি এই সব প্রশ্নের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কাছেও।
শো-কজের চিঠি পাওয়া এক চিকিৎসক সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, "অনিয়ম থাকলে অবশ্যই জবাব দিতে হবে চিকিৎসকদের, কিন্তু সেটা আর জি করের ঘটনার মধ্যে কেন? যাঁরা প্রতিবাদ আন্দোলনে রয়েছেন, তাঁদেরকেই কেবল শো-কজ কেন? স্বাস্থ্য দপ্তরের কথায়, দীর্ঘ দিন ধরে এমন অনিয়ম চলছে। তাহলে আগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? না কি শুধুমাত্র প্রতিবাদ থামাতে এমন শো-কজ?"
শোকজের নোটিশ পাওয়ার পরে ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, যে অভিযোগের ভিত্তিতে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে, সেই অভিযোগ বহু দিনের। গোটা তমলুক শহরে প্রায় ৮০ টির বেশী সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। আর ওই সবকটিতে তৃণমূল নেতাদের মালিকানা রয়েছে। তমলুকে মোট ১১ লক্ষ মানুষ বাস করেন। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে ১৪ লক্ষ মানুষের। এত ভুয়ো কার্ড কীভাবে নথিভুক্ত হল, তার উত্তর মেলেনি স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে।
ডাক্তারদের দাবি, প্রতিবাদ থামাতে দুর্নীতির বিষয়ে চিকিৎসকদের জড়িয়ে দিতে চাইছে স্বাস্থ্য দপ্তর। যদি চিকিৎসকদের জড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে নার্সিংহোমগুলি রেহাই পাবে। কারণ, সেগুলির মালিকানায় তৃণমূল নেতাদের ভাগ রয়েছে।
এবিষয়ে তমলুকের আর এক চিকিৎসক বলেছেন, "স্বাস্থ্য দপ্তর যে বিষয়গুলি নিয়ে আমাদের শো-কজ করেছে, তার প্রত্যেকটিরই উত্তর ওই নার্সিংহোমগুলির এবং জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছেই রয়েছে। তারা নিজেদের দুর্নীতি আড়াল করতে এবং পরোক্ষভাবে প্রতিবাদকে থামানোর প্রয়াস গ্রহণ করেছে। তবে আর জি করের ঘটনার প্রকৃত বিচার যত দিন না হচ্ছে, এমন দমনপীড়ন করে প্রতিবাদ থামানো যাবে না। বরং বাড়বে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন