জমি দখলের জেরে ইদের আগে খুন হন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী। সেই তৃণমূল কর্মীকে 'শহিদ' বলে আখ্যায়িত করলেন সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। আর তৃণমূল বিধায়কের মন্তব্য ঘিরে কটাক্ষ রাজনৈতিক মহলে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২৩ মাস পর জেল মুক্তি পেয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য। এরপর শনিবার দুপুরে তিনি নিজের বিধানসভাযর পলাশিপাড়া এবং বার্নিয়া এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সারেন। পরে নেতাকর্মীদের নিয়ে যান হরনগরে। বৃষ্টির মধ্যেই সন্ধ্যায় একটি পথসভা করে জমির দখল নিয়ে দ্বন্দ্বে খুন হওয়া ঘুনি এলাকার তৃণমূল কর্মী জাহিদুল শেখের বাড়িতে যান মানিক। তার আগে সভা থেকেই জহিদুলকে ‘শহিদ’ আখ্যা দেন তৃণমূল বিধায়ক।
মানিক বলেন, ‘‘যে দিন ঘটনার কথা শুনেছিলাম, সে দিনই জুব্বার (তৃণমূল নেতা) ভাইকে ফোন করে বলেছিলাম, প্রত্যেক এলাকায়, প্রতিটি গ্রামে একটা করে যদি জহিদুল থাকে তবে দিদিকে (মমতা ব্যানার্জি) বলে দিতে পারি, আগামী চল্লিশ বছর এই বাংলায় তৃণমূলের ভিত কেউ নড়াতে পারবে না।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘চোখের মণির মতো ভালবাসতাম জহিদুলকে। যে দিন খবর পেলাম জহিদুল আর নেই, সে দিনই আমার বুকের একটা একটা করে হাড় মড়মড় করে ভেঙে গিয়েছে। জুব্বার ভাইকে ফোন করে বলেছিলাম, যদি মুক্তি (জেল থেকে) পাই, তবে প্রথমেই আমাদের শহিদের বাড়িতে যাব। আমরা সবাই তাঁর পরিবারকে বার্তা দেব যে তৃণমূল একটি পরিবার। আমরা সবাই তাঁদের পাশে আছি।’’
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল রাতে তৃণমূল নেতা জুব্বারের গাড়িতে হরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা তথা স্ত্রী তাগিরা বিবি, পুত্র রকিব শেখ এবং প্রতিবেশী আদ্রুপ শেখকে নিয়ে বেথুয়াডহরিতে ইদের বাজার করতে যান জহিদুল। ফেরার পথে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ঘুনির মোড় অতিক্রম করতেই রাস্তায় গাছ পড়ে থাকতে দেখে জহিদুল গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন নামান।
অভিযোগ, সেই সময় তখনই তাঁদের লক্ষ্য করে বোমাবাজি শুরু হয়। এরপর ঘটনাস্থলে প্রায় দশ জন দুষ্কৃতী গাড়ির দরজা খুলে চার যাত্রীকে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় জহিদুলের। অভিযোগ ওঠে, ধাপারিয়া এলাকায় একটি জমির দখলকে কেন্দ্র করে জুব্বারদের সঙ্গে তৃণমূলেরই আর এক গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে ওই হামলা হয়।
অন্যদিকে, মানিকের মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেছেন কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘নিজে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছেন। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। তিনিই তো এক দুষ্কৃতীকে শহিদের মর্যাদা দেবেন। সেটাই তো স্বাভাবিক। আসলে তৃণমূলের সংস্কৃতি হল গুন্ডা এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে দমিয়ে রাখার সংস্কৃতি।’’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন