বাবা ও ছেলের একসঙ্গে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল গোটা কোচবিহার জেলায়। শুধু জেলায় নয়, এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতেও। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার গীতালদহ দুই নম্বর পঞ্চায়েত এলাকায়। মৃতের নাম প্রদীপ বর্মন এবং তাঁর নাবালক ছেলের নাম পল্লব বর্মন।
গীতালদহ ২ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান বীথিকা বর্মনের স্বামী প্রদীপ বর্মন ও তাঁদের ছেলে বুধবার ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। অভিযোগ, দলের কোনও নেতা তাদের এক কোটি টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। সেই চাপ সহ্য করতে না পেরেই সপুত্র তিনি আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনায় রবীন্দ্রনাথ ঘোষের গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে।
জেলার রাজনীতিতে তৃণমূল জেলা সভাপতি পার্থপ্রতীম রায়ের অনুগামী বলে পরিচিত বীথিকা ও প্রদীপ বর্মন। বুধবার উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস কোচবিহার থেকে দিনহাটা যাওয়ার পথে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন বাবা ও ছেলে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বীথিকাদেবীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে তৃণমূলেরই জগদীশ বর্মা বসুনিয়া গোষ্ঠী। তারপর পঞ্চায়েত প্রধান হন মোক্তার নামে এক ব্যক্তি। অভিযোগ, তারপর থেকেই প্রদীপবাবুর কাছে টাকা চাইছিলেন জেলা পরিষদের এক সদস্য। বীথিকাদেবীকেও নিয়মিত ফোনে হুমকি দেওয়া হত। লাগাতার তাঁর কাছে এক কোটি টাকা দাবি করে আসছিলেন সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়ার অনুগামী বলে পরিচিত কোচবিহার জেলা পরিষদের কর্মদক্ষ নুর আলম হোসেন। সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন প্রদীপবাবু। এই অনুমানকে সমর্থন করেছেন প্রদীপবাবুর ভাই সন্দীপ বর্মন।
দলীয় কর্মীদের বক্তব্য, এত বেশি খাওয়াখায়ি চলছে যে, প্রদীপবাবুর ভয় ছিল যে তিনি না থাকলে দল তাঁর ছেলের ক্ষতি করতে পারে। তাই তিনি ছেলেকে নিয়ে আত্মঘাতী হলেন। জোড়া আত্মহত্যার জন্য জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নুর আলমকে দায়ী করেছেন দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক আবু আল আজাদ।
কোচবিহার পুলিশ সুপার সুমিত কুমার জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে অনুমান এটা আত্মহত্যা। জগদিশ বর্মা বসুনিয়া বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি, তাতে প্রদীপবাবুর কাছে ব্যক্তিগতভাবে কেউ টাকা পেতেন। সে টাকা আদায়ের জন্য বাড়ি গিয়ে কিছু লোক চাপ দেয়। পার্থপ্রতিম রায় এবং উদয়ন গুহের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করছে পুলিশ। দলীয়ভাবেও তদন্ত চলবে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন