সিবিআই হেফাজতে বগটুই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে সোমবার। যা ঘিরে ইতিমধ্যেই তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। লালনের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করলেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। আদালতে তিনি দ্রুত শুনানির আর্জি জানান। শীঘ্রই শুনানির সম্ভাবনা আছে বলেই জানা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে। বগটুই গণহত্যার মূল অভিযুক্তের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। লালনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলেছে সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস।
এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, গ্রেফতার হওয়ার পরে যে সিবিআই হেফাজতে ছিল, তার এমন মৃত্যুতে দুর্ঘটনা, ষড়যন্ত্রের প্রশ্ন উঠবেই। পরিবারের অভিযোগ খুন, সিবিআই বলছে আত্মহত্যা। এই অবস্থায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু সিবিআইকেই তো কৈফিয়ত দিতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে। অভিযুক্ত হোক বা অপরাধী, হেফাজতে মৃত্যু কখনও চলতে পারে না। দেখতে হবে, এতে কাদের লাভ হল। তার মৃত্যুতে কী ধাপাচাপা দেওয়া গেল, ধামাচাপা দিলে কী লাভ হল?
প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার বলেন, ওই অভিযুক্তের বাড়িতে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেল, আর তিনি ‘আত্মহত্যা’ করলেন! বর্তমান কোনও বিচারপতিকে দিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন। এটাও কি বিজেপি-তৃণমূল সমঝোতার আর একটা ফল? এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ভাইপো মেঘালয়ে গিয়েছেন কংগ্রেসের ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে। অন্য দিকে এখানে তৃণমূলের অস্বস্তি কমানোর একটা চেষ্টা হল? সিবিআইকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
অন্যদিকে, লালনের মৃত্যুর ঘটনায় ফের নিরাপত্তাহীনতা এবং অশান্তির আশঙ্কায় ভুগছেন বগটুইবাসী। সেখানে থমথমে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে। যার জেরে ইতিমধ্যেই সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, গতকাল বিকেল ৪:৫০ মিনিট নাগাদ রামপুরহাটে সিবিআই-র অস্থায়ী ক্যাম্পের শৌচাগারে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। গলায় লাল গামছা বাঁধা অবস্থায় তার দেহ উদ্ধার করা হয়। যদিও সিবিআই আধিকারিকদের দাবি, লালন আত্মহত্যা করেছেন।
তবে, সিবিআই-র বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনেছেন লালনের স্ত্রী। ৩০২ ধারায় সিবিআই-র বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তারা লালনের দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে । ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য রামপুরহাট পৌঁছেছে ৪ সদস্যের সিআইডির দল।
অন্যদিকে, লালনের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সোমবার রাতেই রামপুরহাটে সিবিআইয়ের অস্থায়ী শিবিরে যান জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। তাঁর কথায়, সিবিআইয়ের ডিআইজির অফিস থেকে সোমবার বিকেল ৪:৪৫ মিনিটে আমার কাছে ফোন আসে। ফোনে আমাকে জানানো হয়, হেফাজতে থাকাকালীন লালনকে জেরা করা হচ্ছিল। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে আমরা আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ৪:৪০ নাগাদ সিবিআই-র তরফে বিষয়টি স্থানীয় থানায় জানানো হয়েছে। লালনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করবে পুলিশ। আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছি। রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন