দিনমজুর থেকে তৃণমূলের উপপ্রধান। মাঝে বেশ কিছুদিন পাথর-বালির কারবার করেছিলেন। আর তারপর সবশেষে হাঁকিয়েছিলেন চারমহলা বাড়ি। নিহত ভাদু শেখের জীবনপঞ্জি দেখে চোখ কপালে উঠেছিল সংবাদমাধ্যম থেকেই বিরোধী নেতা- সবারই। তাঁর মৃত্যুর ঘটনার প্রতিশোধ নিতে বকটুই গ্রামে যে গণহত্যাকাণ্ড চলে, সেই ঘটনার মূল অভিযুক্ত আনারুল হোসেনের উত্থানে কাহিনী এবার নজর কাড়ল।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবিলম্বে আনারুলকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। তারপরেই এলাকা ছাড়া হন আনারুল। তারাপীঠের এক হোটেলে ওঠেন। এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে পুলিশ তৎপর হয়। রামপুরহাট শহরের সন্ধিপুরে আনারুলের বাড়িতে তাঁকে পাওয়া না গেলেও ঘিরে ফেলে পুলিশ। এরপর মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে সন্ধান মেলে আনারুলের। লোকেশনে তারাপীঠের একটি হোটেল পাওয়া যায়। ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন আনারুল।
তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শোনা গিয়েছে, স্থলাভিষিক্ত করা হয় জেলা তৃণমূল কমিটির সদস্য সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে। যদিও আনারুলের দাবি, তিনি নির্দোষ। ঘটনার সময় ছিলেন হাসপাতালে। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। স্বয়ং পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী তাঁকে জেরা করছেন বলে সূত্রের খবর।
কে এই আনারুল? জানা গিয়েছে, একসময়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তিনি। তার আগে ছিলেন রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। তারপর কংগ্রেসে যোগ দিয়ে শুরু রাজনৈতিক কেরিয়ার। ছোটখাট সভায় তাঁকে প্রায়শই দেখা যেত। এরপর যখন তৃণমূল তৈরি হয়, তখন থেকেই জোড়াফুল শিবিরের লোক তিনি। সূত্রের খবর, স্থানীয় বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল চোখে পড়ার মত। তারপর ঘনিষ্ঠ হন বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে।
আনারুলকে ব্লক সভাপতি করার নেপথ্যেও কেষ্টর হাত ছিল বলে তৃণমূল অন্দরের খবর। আনারুল ও ভাদু শেখের সম্পর্ক অনেকটা দুই ভাইয়ের মতো ছিল। তাঁর ছত্রছায়ায় ভাদুর দাপটের মাত্রা বাড়ে। নিহতদের অভিযোগ, আনারুলের নির্দেশেই এই নৃশংস অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। আগুন লাগার পর আনারুলকে ফোন করে পুলিশ ডাকতে বলা হলেও কাজ হয়নি। এলাকার পুলিশ তাঁর কন্ট্রোলে থাকে। এমনটাই ভাবতেন স্থানীয়রা। তাই বিপদে পড়ে তাঁরা ভরসা করেছিলেন তাঁকেই। কিন্তু কোনও কাজই হয়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন