রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে নিহতদের আত্মীয়রা এবার মুখ খুললেন। নিহতদের কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন তাঁরা। নিহত ৮ জনের মধ্যে ৬ জন মহিলা ও ২টি শিশু রয়েছে। দুষ্কৃতীদের নৃশংসতার হাত থেকে নিস্তার পায়নি দুটি শিশুও। আত্মীয়দের অভিযোগ, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রথমে কুপিয়ে খুন করা হয়। তারপর তাঁদের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। দুই শিশুকেও একইভাবে কুপিয়ে খুন করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি।
রামপুরহাটের বগটুই মোড়ে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ নিহত হন। অভিযোগ, তারপর বগটুই গ্রামের একের পর এক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘টিভি বা গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন লেগেছিল’। কিন্তু তত্ত্ব যে ঠিক নয়, তা বুঝিয়ে দিলেন নিহত মিনা বিবির ছেলে ভাসান শেখ।
পেশায় রাজমিস্ত্রির ভাসান পাশেই পশ্চিম পাড়ায় পিসিবাড়িতে থাকেন। তাঁর অভিযোগ, ওই বাড়িতে ঢোকার আগে দুষ্কৃতীরা বোমা মারে। তারপর তাঁর মাকে প্রথমে কুড়ুল দিয়ে ঘাড়ে, মাথায়, পেটে কোপ মারে। তাতেও না থেমে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়। ঘটনাটি নিজের চোখে দেখেছে তাঁর ভাইপো ও ভাগ্নিও। সেই বোমার শব্দে তারা ঘর থেকে পালিয়ে বাথরুমের পাশে ঝোপের আড়ালে অন্ধকারে লুকিয়ে ঘটনা প্রত্যক্ষ করে।
একই দাবি করে বড়শাল পঞ্চায়েতের কামাখ্যা গ্রামের তৃণমূল সদস্য নিউটন শেখ অভিযোগ করেন, সবাইকে কুড়ুল দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে পেট্রোল ঢেলে পোড়ানো হয়েছে। সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। অভিযোগ, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পশ্চিমপাড়ার আপাং শেখ, নূর মহাম্মদ ও লালন। মূল পান্ডা এই লালনই। তিনি বলেন, 'লালন শেখ এখন উত্তর ২৪ পরগনায় এক পির সাহেবের বাড়িতে রয়েছে। সেখান থেকেই খুনের হুমকি দিচ্ছে।'
নিউটন শেখের আরও অভিযোগ, ভাদু শেখকে খুন করার মূল কারণ হচ্ছে তোলাবাজি। জাতীয় সড়কে গাড়ি থামিয়ে তোলাবাজি চালাত ভাদু। জমির দখলদারি পাইয়ে দেওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা নিত। কেউ প্রতিবাদ করলেই জুটত হুমকিও। নিউটনের দাবি, একাধিকবার জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে এবিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
এমনকী, চারবার সরাসরি অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ি গিয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসেন। এমনকী যে কোনও মুহূর্তে ভাদু শেখ খুন হতে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী, আইসি এবং এসডিপিওর দ্বারস্থ হলেও লাভ হয়নি।
এখন প্রশ্ন, একই বাড়িতে এত জন একসঙ্গে কী করছিলেন। এব্যাপারে জানান, সেদিন ভাদু খুনের ঘটনাটি পর এলাকার লোকজনকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু ওই বাড়িটির চারিদিকে পাঁচিল, মজবুত গেট ছিল। তাই কেউ কোথাও না গিয়ে বাড়িটিকে নিরাপদ ভেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু দুষ্কৃতীরা গ্রিল ভেঙে বাড়ি ঢুকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন