সাংবাদিক বৈঠক করে সংবাদমাধ্যমকে তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমের কারণেই ধর্ষণ বাড়ছে। আজ নবান্ন থেকে তিনি বলেন – “কিছু কিছু টিভি চ্যানেল নিজেদের টিআরপি বাড়ানোর জন্য কর্ণাটক, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ থেকে রাজনৈতিক নেতাদের আনছেন। তাঁরা এমন বাংলা ভাষায় কথা বলছেন যে সেটা বাংলা না হিন্দি না গুজরাটি না রাজস্থানী কিছুই বোঝা যায়না, ভাষাটাই জানে না।”
তাঁর অভিযোগ – “রোজ খুন আর ধর্ষণ দেখিয়ে টিআরপি বাড়াচ্ছে চ্যানেলগুলো। আগে টিভি চ্যানেল ছিল দর্শনধারী, এখন কেউ কেউ বলেন, টিভি চ্যানেল ধর্ষণধারী। এটা আমার কথা না। ধর্ষণ হোক বা না হোক, অভিযোগ পেলেই দেখিয়ে দিচ্ছে। আরে ভাই মিডিয়া ট্রায়াল না করে আপনারা আগে খোঁজ নিন, প্রশাসনের কাছ থেকে ক্রস চেক করুন যে এরকম ঘটনা ঘটেছে কিনা! ... ঘটনাটা যেখানে ঘটেছে সেখানে ইনভেস্টিগেশন টিমর পৌঁছতে সময় লাগবে। তার ওপর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, ফরেনসিক রিপোর্ট - এই সবকিছুর উপর রিপোর্ট নির্ভর করে। আন্দাজে রিপোর্ট বলা যায় না।”
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন – “আমাদের রাজ্যে একটি ভালো জিনিস আছে। এখানে বেশি গণতন্ত্র আছে বলে বেশি অভিযোগ দায়ের হয়। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে অভিযোগ জানাতে দেয় না, গুজরাটে দেয়না, রাজস্থানে দেয় কিনা আমি জানিনা, মধ্যপ্রদেশে দেয় না। আমাদের এখানে একটি কেস হলেই আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলি যদি এটা সত্যিই হয়ে থাকে। ... এমনকি আমার তৃণমূল ব্লক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কেস থাকলেও, আমি তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে অ্যারেস্ট করার নির্দেশ দিই।”
বেশ কিছু জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের নাম উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সকাল থেকে এই চ্যানেলগুলো দেখাতে শুরু করে অমুক লোক অভিযোগ করেছে অমুকের নামে যে উনি নাকি তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন। আপনি দেখেছেন ঘটনাটা সত্যি কিনা। আমার বিরুদ্ধে কত অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো। ঘটনার সত্যতা যাচাই করেছেন?”
সংবাদমাধ্যমের ভূমিকায় রীতিমত ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দিয়ে তিনি বলেন – “আপনাদের কথায় আমি আমাদের একজন ব্লক প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছি, জলপাইগুড়িতে। আমি দেখব এটা সত্যি কিনা। যদি অভিযোগ সত্যি হয় গ্রেফতারের পর অ্যাকশন নেওয়া হবে। যদি অভিযোগ ঠিক না হয় তাহলে কিন্তু এই অ্যাকশনটা আপনাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে। এগুলোও এক ধরনের হেট স্পীচ। একটা খবর সারা দিন দেখিয়ে বিদ্বেষ তৈরি করা। সুপ্রিম কোর্ট অলরেডি বলেছে হেট স্পীচের বিরুদ্ধে কড়া অ্যাকশন নিতে, নিশ্চয় জানা আছে। টিআরপি বাড়াতে গিয়ে একটা ছোট্ট ঘটনা নিয়ে এমন কিছু করবেন না যাতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।”
এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ধর্ষণের ঘটনা বাড়ার জন্য তিনি সরাসরি সংবাদমাধ্যমকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন –“আপনাদের জন্য ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। টিভিতে নাম দেখাবে, প্রচার পাবে এই মানসিকতা তৈরি হচ্ছে মানুষের মধ্যে।তারা ভাবছে কি আর এমন হবে, ২ বছর জেল খাটার পর ছাড়া পেয়ে যাব তো।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন