আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচি নিয়ে এবার বেলাগাম রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। মন্ত্রীর দাবি, রাত দখল কর্মসূচিতে গিয়ে গভীর রাতে মেয়েরা মদের দোকানে যাচ্ছেন। মদ খাচ্ছেন। আর তাঁদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা সতর্ক হতে হচ্ছে প্রশাসনকে। মন্ত্রীর এই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে তাঁকে নিশানা করছে বিরোধী শিবির।
বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষ্যে সোমবার পূর্ব বর্ধমানের কালনা বাসস্ট্যান্ডে এক অনুষ্ঠান থেকে মন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘রাত ২টো হোক বা ১১টা, মিছিল করা কিংবা রাত জাগায় অংশ নেওয়ার পরিবেশ বাংলায় আছে বলেই তো মেয়েরা তা করতে পারছেন।’’ মন্ত্রী এ-ও বলেন, ‘‘আর জি কর-কাণ্ডে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থন রয়েছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা অর্থাৎ, ফাঁসির দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমিও তাই চাইছি।’’
মন্ত্রী বলেন, “আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাত জাগাতে অংশ নেওয়া মহিলাদের, গভীর রাতে মদের দোকানে মদ খেতে যাওয়া মহিলাদের পাহারা দিতে হচ্ছে আমাদেরই।’’ পূর্বস্থলী দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক এও বলেন, ‘‘আমার এলাকায় দেখেছি একটি দোকানে রাতে মেয়েরা মদ কেনেন। খবরটা পাওয়ার পর আমি দু’দিন পর পর সেখানে রাতে গিয়েছি। কোন মেয়েরা হোটেলে মদ খেতে চায় সেটাও দেখতে। আমি হোটেলওয়ালাকে বলে এসেছি, এখন থেকে আর কোনও মহিলাকে হোটেলে মদ খেতে দেওয়া যাওয়া যাবে না।’’
তাঁর সংযোজন, ‘‘এটাও তো আমাকেই দেখতে হয়। ওই মহিলারা যদি মদ খেতে যান, সেখানে যদি কোনও অঘটন ঘটে যায়, তখন কী হবে? সে জন্য তো আমাদেরই পাহারা দিতে হচ্ছে। এখন দেখতে পাচ্ছি, আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে পরের দিনই বিদেশে বেড়াতে চলে গিয়েছেন অনেকে। পুজোয় মন নেই বললেও প্রতিবাদী মুখ, প্রতিবাদে অগ্রণী ব্যক্তিরাই পুজো উপলক্ষে স্ত্রীর জন্য কালনা শহরের বড় বড় দোকান থেকে দামি শাড়ি কিনছেন।’’
অন্যদিকে, মন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল সরকার বাংলায় ক্ষমতায় এসে উজাড় করে মদের দোকানের লাইসেন্স দিয়ে গিয়েছে। মদ বিক্রি থেকেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পায় রাজ্য সরকার। এখন রাজ্যের মন্ত্রী হয়ে স্বপন দেবনাথ যদি আবার গভীর রাতে মদের দোকানে গিয়ে কে মদ খাচ্ছেন, সেটা দেখতে যান, সেটা আরও বড় লজ্জার।’’
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই মন্ত্রীসভার বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল আরজি কর নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে পারবেন না, মন্তব্য করতে পারবেন না। যদিও শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ উপেক্ষা করে রাজ্য মন্ত্রীসভার এ হেন বিতর্কিত মন্তব্যে সরগরম রাজনৈতিক মহল।
তবে শুধু স্বপন দেবনাথই নন। এর আগে একাধিক তৃণমূল বিধায়ক, নেতা আরজি কর আন্দোলনকে কটাক্ষ করে বক্তব্য রেখেছেন। সেই তালিকায় আছেন তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক, উদয়ন গুহ। আন্দোলন সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে বিতর্ক বাড়িয়েছেন সাংসদ কাকলী ঘোষদস্তিদার, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন