করোনা আবহে গত দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনলাইনে ক্লাস চলছে বটে। কিন্তু পরীক্ষা হয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের। অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দি পড়ুয়ারা। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনার বিকল্প ব্যবস্থা করার ভাবনা চিন্তা করছে এসএফআই। সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামী ১২ আগস্ট রাজ্যজুড়ে মক ক্লাসের আয়োজন করা হচ্ছে। রাজ্যের এক হাজার কেন্দ্রে উন্মুক্ত ক্লাসঘরে খাতা, কলম নিয়ে বসবে ছাত্রছাত্রীরা। সংগঠনের উদ্দেশ্য সরকারকে বোঝানো যে এভাবেও ক্লাস করা যায়।
শুক্রবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য জানান, রাজ্যের এক হাজার জায়গায় খাতা, কলম নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা বসে ক্লাস করবে। তার আগে ৪ আগস্ট কলেজ স্ট্রিটে নাগরিক কনভেনশনে রাজ্যে পঠনপাঠন স্বাভাবিক করার আন্দোলন শুরু করবে এসএফআই। সাংবাদিক সম্মেলনে এসএফআই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ রেখে কেন্দ্র এবং রাজ্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে সঙ্কুচিত করার ষড়যন্ত্র করছে। তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন চালাবে সংগঠন।
৫ আগস্ট গোটা রাজ্য জুড়ে মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত হবে। ৬ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট টানা সই সংগ্রহ অভিযান চলবে। ১১ আগস্ট রাজ্যের সব ব্লকের বিডিও’কে ডেপুটেশন দেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গের চা-বাগানের প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়াদের প্রসঙ্গে ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, এই সব পড়ুয়া ও আদিবাসী পরিবারের বড় অংশের ছাত্রছাত্রীরা এই মহামারীর সময়ে শিক্ষাঙ্গন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই অঞ্চলগুলিতে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে। যে শ্রমিকরা দৈনিক ২০২ টাকায় কাজ করছেন, তাঁদের পক্ষে স্মার্ট ফোন কেনা কষ্টসাধ্য। হাতে স্মার্ট ফোন না থাকা, ইন্টারনেট পরিষেবার সমস্যা, ডেটা প্যাকের বরাদ্দ খরচ করতে না পারায় লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে ড্রপ আউট হচ্ছে। এমনভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিচালনা করা হচ্ছে তাতে ছাত্রছাত্রীরা একটু একটু করে যাতে নিজেরাই শিক্ষার আঙিনা থেকে সরে যায় তার বন্দোবস্ত করছে সরকার। তফশিলি জাতি ও আদিবাসী স্কলারশিপ ভয়ঙ্করভাবে কমিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার স্বার্থে সরকারি উদ্যোগে বিকল্প ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করার দরকার।
সম্প্রতি রাজ্য সরকারের ঘোষিত স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের বিরোধিতা করে এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, এটা একটা সরকারি ফাঁদ। পড়াশোনার জন্য সরকার ধার না দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এইড ফান্ড, এডুকেশন লোন দিক। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড একটা অসফল প্রকল্প হিসাবে গোটা পৃথিবী জুড়ে প্রমাণিত হয়েছে। দার্জিলিঙ, আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ গড়ার ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু ঘোষণাই সার, বাস্তবে ফাঁপা। উত্তরবঙ্গকে অবহেলা করে রাখলে চলবে না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন