রাজ্যবাসীকে এক ছাতার তলায় যাবতীয় সরকারি পরিষেবা প্রদানের জন্য দুয়ারে সরকার প্রকল্প চালু করেছিল রাজ্য সরকার। তবে এবার তা শুরু হতে চলেছে সম্পূর্ণ নতুন রূপে। সোমবার থেকে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় শুরু হয়েছে 'স্পেশাল দুয়ারে সরকার' শিবির। চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে দুয়ারে সরকারের এই বিশেষ শিবিরে পরিষেবা প্রদানের তালিকায় নেই ১০০ দিনের কাজের উল্লেখ।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয়েছিল দুয়ারে সরকার প্রকল্প। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির শুরুতে পরিষেবা প্রদানের প্রথম ধাপ হিসেবেই ছিল ১০০ দিনের জব কার্ড বিলি করা। এই প্রথমবার রাজ্যে চালু হওয়া 'স্পেশাল দুয়ারে সরকার' প্রকল্পে থাকছে না ১০০ দিনের কাজ।
রাজ্যের অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজে গত ৬ মাসের টাকা বকেয়া রেখেছে কেন্দ্র সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর অভিযোগ, বকেয়া ৬ হাজার কোটি টাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এমনকি চলতি আর্থিক বছরের লেবার বাজেটও অনুমোদন করেনি কেন্দ্র সরকার। মূলত এই পরিস্থিতির জন্যই রাজ্যে সরকারের অধীনে থাকা সবকটি দপ্তরে ১০০ দিনের কাজের জন্য জব কার্ড ব্যবহার করার কথা জানিয়েছিল রাজ্য সরকার।
গতমাসে জঙ্গলমহল সফরে গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, "গত ডিসেম্বর থেকে ১০০ দিনের কাজে মাইনে দেওয়া হয়নি। এখন থেকে পূর্ত দপ্তরকে আমরা বলে দিয়েছি, এলাকায় যত কাজ হবে ১০০ দিনের জব কার্ড গ্রাহকদের নিতে হবে। সেচ দপ্তর, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তর, তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তর, আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তর - সব ডিপার্টমেন্টকে বলা হচ্ছে কাজ করতে হবে ১০০ দিনের জব কার্ড গ্রাহকদের নিয়ে।"
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেও দুয়ারে সরকারের বিশেষ শিবিরে কেনো ১০০ দিনের কাজকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর কারণ হিসেবে এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানিয়েছেন, "এখন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যেসব কাজ চলছে তা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন খাতের টাকা, নয়তো এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের টাকায়। এইসব কাজ একদমই দক্ষ শ্রমিকদের। তাছাড়া এই ধরণের প্রকল্প নির্ভর কাজে হঠাৎ করে কোনোভাবেই বাইরে থেকে অদক্ষ শ্রমিকদের যুক্ত করার উপায় নেই।"
অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা থাকলেও রাজ্যের কোনও দপ্তরের কাজে MGNREGA-তে নিযুক্ত শ্রমিকদের কাজ করার সুযোগ খুবই কম। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, একমাত্র সেচ দপ্তরের কাজে ১০০ দিনের শ্রমিকদের নিযুক্ত করা যেতে পারে। যদিও সেই সংখ্যা খুবই কম।
সেক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন উঠছে তাহলে হঠাৎ কেনো এই বিশেষ শিবিরের আয়োজন? চলতি মাসের শুরুতেই রাজ্যের মুখ্যসচিব বলেছিলেন, "দুয়ারে সরকার করা স্বত্ত্বেও আদিবাসী মানুষ এই পরিষেবা নিতে পারেনি। সরকার এক ছাতার তলায় সব পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছিল। শিবির থেকে পাট্টার কাগজ মানুষকে বিলি করা হয়েছে। কিন্তু কাগজ নিয়ে মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। জমি দেওয়া হয়নি।" বিরোধীদের দাবি, আসলে দুয়ারে সরকার প্রকল্পে প্রান্তিক মানুষদের সরকারি সুবিধা দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এই বিশেষ শিবির। কারণ জঙ্গলমহলে জেলা প্রশাসনিক বৈঠকের পরই ১৩ জুন থেকে নতুন দুয়ারে সরকার প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে সূত্রের খবর।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন