গঙ্গাকে স্বচ্ছ এবং দূষণমুক্ত করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় জেলা পরিষদের উদ্যোগে কিছু অঞ্চলকে প্লাস্টিকমুক্ত করার অভিযান চালানো হয় । গঙ্গা তীরবর্তী ১৮টি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় কাজটি সম্পূর্ণ হয়েছে ।
স্বচ্ছ ভারত মিশন-গ্রামীণ-এর দ্বিতীয় পর্বে এপ্রিল মাসে এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে । এর মূল উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট অঞ্চলকে খোলা স্থানে শৌচকর্ম মুক্ত রাখা এবং কঠিন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দৃশ্যদূষণ দূর করা। রাজ্যের সহযোগিতায় হাওড়া জেলা পরিষদ গঙ্গা তীরবর্তী গ্রামগুলিতে এই অভিযান চালানোর ফলে পবিত্র নদীর পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে । একাজে ‘আমরা সুষমা জলপ্রপাত’ সংগঠনটি সাহায্য করেছে ।
এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য :
• গঙ্গার জীববৈচিত্র ফিরিয়ে আনা যার ফলে মাছ, সরীসৃপ, ডলফিন সহ অন্যান্য জলজ প্রাণী সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে ।
• জলের বাস্তুতন্ত্র এবং জীববৈচিত্র রক্ষা করা ।
• গঙ্গাকে স্বচ্ছ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যার মধ্য দিয়ে কৃষিকাজে পরিচ্ছন্ন জল ব্যবহার করা যাবে ।
• নদীর নাব্যতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ।
• গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ।
হাওড়া জেলা পরিষদ কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং গ্রামগুলিকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে । এই কাজে গঙ্গা তীরবর্তী ১৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সাহায্য নেওয়া হয়েছে । যে গ্রামগুলি এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল সেগুলি হল :
সাঁকরাইল ব্লক : বানুপুর ১ ও ২, সাঁকরাইল, দক্ষিণ সাঁকরাইল, রঘুদেববাটি, সারেঙ্গা, মানিকপুর, ঝোরেহাট, পাঁচপাড়া এবং থানামাকুয়া ।
উলুবেড়িয়া ১ নম্বর ব্লক : ধুলাসিমলা, হীরাপুর, কালিনগর ।
শ্যামপুর ১ নম্বর ব্লক : বানেশ্বরপুর ১ এবং ২, বেলারি, ডিঙাখোলা, নবগ্রাম ।
কাজের অগ্রগতি :
হাওড়া জেলা পরিষদ এই কাজটি সফলভাবে রূপায়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিল । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগগুলি হল :
• ১৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিশেষ কর্মশালার ব্যবস্থা করা ।
• গঙ্গা সংলগ্ন অঞ্চল থেকে প্লাস্টিক দূর করার জন্য ৫৪৮২ জন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে মোট ১৮০টি বৈঠক করা ।
• বাজার কমিটি এবং দোকানদারদের সঙ্গে ৩৬টি বৈঠক ।
• ৩৬টি জায়গায় প্লাস্টিক সংগ্রহের জন্য বিশেষ বাক্স ।
• ২০২১ সালে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা(সংশোধিত) নিয়মাবলী ৫৪টি জায়গায় টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
• ১৮ দিন ধরে গঙ্গা তীরবর্তী গ্রামগুলিতে ৯.৩২ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ।
• প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা হয় এ রকম বিধিবদ্ধ সংস্থায় সংগৃহিত প্লাস্টিকের মধ্যে ৮ মেট্রিক টন প্লাস্টিক পাঠানো হয়েছে ।
• স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল থেকে নিয়মিত প্লাস্টিকের বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে ।
এই প্রকল্পে নির্বাচিত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি, পঞ্চায়েত কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য এবং বাজারগুলির বিক্রেতারা অংশ নিয়েছে । এর মাধ্যমে প্রকল্পটি সফল হয়েছে । স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করায় প্রকল্প রূপায়নে যথেষ্ট সুবিধা হয়েছে । হাওড়া জেলা পরিষদের এই উদ্যোগকে স্থানীয় মানুষ স্বাগত জানিয়েছেন ।
প্লাস্টিকমুক্ত গ্রাম পঞ্চায়েত নিশ্চিত করতে করার জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা ওই এলাকায় নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে । এছাড়াও মানুষ যাতে যেখানে সেখানে প্লাস্টিক না ফেলে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে । গঙ্গানদী এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন