২০১১ সালে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকেই ঘরছাড়া রয়েছেন বলে অভিযোগ আমতার স্থানীয় বাসিন্দাদের। রবিবার সেই ঘরছাড়াদেরই পুনরায় ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ নিল সিপিআই(এম)। কিন্তু গ্রামবাসীদের ঘরে ফেরাতে গিয়ে বারংবার পুলিশ প্রশাসনেরই বাধার সম্মুখীন হতে হল তাঁদের। পাশাপাশি, অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও।
সূত্রের খবর, রবিবার দুপুর ৩টে নাগাদ প্রায় শতাধিক ঘরছাড়াদের নিয়ে দুটি বাস উলুবেড়িয়া থেকে আমতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। অভিযোগ, মাঝপথে নারকেলতলায় কোনও কারণ ছাড়াই বাস দুটি আটকে দেয় পুলিশ। খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে পৌঁছান সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।
ঘটনাস্থল থেকেই সেলিম পুলিশকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, কোন আইন অনুযায়ী বাস আটকানো হলো? রাস্তা দিয়ে কি সব বাসই আটকানো হচ্ছে? তাহলে বেছে বেছে আমাদের দুটি বাসই আটকানো হলো কেন? উত্তরে আমতা থানার পুলিশ জানায়, বাসযাত্রীদের বিরুদ্ধে একাধিক এফআইআর, গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তাই তারা গ্রামে যেতে পারবে না।
পাল্টা সিপিআই(এম) নেতা বলেন - এফআইআর-এ নাম থাকলেই সে দোষী বা এলাকায় যেতে পারবে না, কোথায় ঠিক হয়েছে? গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে পুলিশ এতদিন কিছু করেনি কেন? আসলে এটা প্রতিহিংসা। পুলিশ তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়ে নির্লজ্জ ভূমিকা পালন করছে। দুপক্ষের মধ্যে তীব্র বচসা চলতে থাকে এবং পুলিশ যথারীতি ঘরছাড়াদের গ্রামে ফিরতে বাধা দেয়।
এই ঘটনার পর সেলিম সহ অন্যান্য নেতৃত্ব গ্রামবাসীদের সাথে বাসে উঠে পড়েন। দুটি বাসই এগোতে শুরু করে চন্দ্রপুরের দিকে। মিনিট ১৫ যাওয়ার পর ১০ নম্বর পোলের কাছে ফের বাসদুটিকে আটক করে পুলিশ। যার জেরে ফের দীর্ঘক্ষণ পুলিশের সাথে তাদের বচসা চলে। শেষমেষ বাসে করেই ঘরছাড়া মানুষদের নিয়ে গ্রামে পৌঁছান সিপিআই(এম) নেতৃত্ব।
বাস থেকে নেমেই সেলিমের নেতৃত্বে গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে শুরু হয় বিশাল মিছিল। বিকেল বেলা গ্রামের ভিতর দিয়ে মিছিল এগোতে শুরু করলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন অন্যান্য বাসিন্দারাও। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ, পরেশ পাল, আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জী, তরুণ ব্যানার্জী সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।
সিপিআই(এম)-র অভিযোগ, চন্দ্রপুর অঞ্চলে তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে দিয়ে মিছিল এগোনোর সময় কুরুচিকর স্লোগান দিতে শোনা যায় শাসক দলের কর্মীদের। তবুও পুলিশের তরফে কোনও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া হয়নি। সিপিআই(এম) সমর্থকদের দাবি, প্ররোচনা উপেক্ষা করে মিছিল এগোতে থাকলে পিছু নেয় তৃণমূল কর্মীরা। গ্রামবাসীদের ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকে তারা। যার ফলে বড় ধরণের অশান্তি এড়াতে এবং ঘরছাড়াদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের ঘরে ফেরানোর প্রক্রিয়া কিছুটা বদল করা হয়েছে।
তবে, সিপিআই(এম) নেতৃত্বের দাবি মেনে পুলিশ প্রশাসন ঘরছাড়াদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে রাজি হলেও, আনিস খানের হত্যার ঘটনায় আরও বেশি করে পুলিশকে ভরসা করতে পারছে না আমতার বাসিন্দারা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন